নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ডাইং ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের (৬২) সাত টুকরা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার সেই নারী (২৮) ও তাঁর বান্ধবী (২৬) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হায়দার আলীর আদালতে তাঁরা জবানবন্দি দেন।
নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, পৃথকভাবে দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি নথিভুক্ত করার পর তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
আদালতে জবানবন্দি দেওয়া দুজনের একজন (২৮) ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা এবং অন্যজনের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া উপজেলার একটি গ্রামে। তাঁরা দুজন রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকতেন। নিহত জসিম নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কাঠেরপুল এলাকার বাসিন্দা। তিনি চাঁদ ডাইং অ্যান্ড নিট কম্পোজিট কারখানার মালিক। স্ত্রী–সন্তানসহ রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করতেন তিনি। রূপগঞ্জের পূর্বাচল ৫ নম্বর সেক্টর–সংলগ্ন লেকপাড় এলাকা থেকে গত বুধবার তাঁর সাত টুকরা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
জবানবন্দিতে এক নারী উল্লেখ করেন, জসিম তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্পর্ক তৈরি করেন। এরপর তাঁকে শেওড়াপাড়া এলাকার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া রাখেন। এ জন্য তাঁকে মাসে মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতেন জসিম। কিন্তু তিনি (নারী) জানতে পারেন, জসিম তাঁকে ছাড়াও অন্য আরেক নারীর সঙ্গে সর্ম্পকে জড়িয়েছেন। তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোয় তাঁর ক্ষোভ তৈরি হয়। সেই ক্ষোভ থেকে তিনি জসিমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে জসিমকে হত্যার পর লাশ গুম করতে সহায়তা করেন তাঁর বান্ধবী।
ওই নারীর বান্ধবী জবানবন্দিতে বলেন, অভিযুক্ত নারী তাঁর বান্ধবী। তাঁর সঙ্গে জসিমের সম্পর্কের বিষয়টি তিনি জানতেন। জসিমকে হত্যার পর বান্ধবী তাঁকে বিষয়টি জানান এবং লাশ গুম করতে সহায়তা চান। বান্ধবীর কথায় তিনি লাশ গুমে সহায়তা করেন।
গত বুধবার সকালে রূপগঞ্জের পূর্বাচলের লেকপাড় এলাকায় হাত ধুতে গিয়ে পলিথিনে মোড়ানো লাশ দেখতে পান এক রিকশাচালক। পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দিলে একটি কালো পলিথিনে বস্তাবন্দী অবস্থায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি ও পিবিআই ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে।
এ ঘটনায় তদন্তে নেমে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যমতে নিহত জসিমের সাফারি স্যুট, জুতা ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এর আগে জসিমের নিখোঁজের ঘটনায় তাঁর পরিবার গুলশান থানায় একটি জিডি করেছিল।