লালমনিরহাট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রাশেদ জামানের (বিলাশ) বিরুদ্ধে পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এক গরু ব্যবসায়ীকে মারধর করে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রাশেদকে প্রধান অভিযুক্ত করে মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে গত সোমবার রাতে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর নাম মো. আইয়ুব আলী (৪৮)। তাঁর বাড়ি জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি এলাকায়। রোববার দুপুরে জেলা শহর থেকে তাঁকে ধরে লালমনিরহাট সরকারি কলেজে নিয়ে চাঁদা আদায় করা হয় বলে তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর ফারুক লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ জামান লালমনিরহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। অভিযুক্ত অন্য চারজন হলেন পৌর এলাকার বালাটারী এলাকার মো. সৌরভ ওরফে টেরা (৩০), ক্যানটিন মোড় এলাকার মো. রায়হান (২৮), বত্রিশহাজারী এলাকার মো. রব্বানী (৩৫), খোর্দ্দসাপটানা এলাকার মো. বাবু (৩৪) এবং জেলা পরিষদ মোড় এলাকার মো. তুষার (২৫)। তাঁরা ছাত্রলীগ নেতা রাশেদের পূর্বপরিচিত।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী উল্লেখ করেন, রোববার বেলা দুইটার দিকে জজ আদালতে হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পর তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে তাঁর (ব্যবসায়ী) পথ রোধ করে দাঁড়ান অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রাশেদ জামানের কথামতো তাঁরা বলেন, ‘ভাই, আপনি তো গরুর ব্যবসা করেন, ছাত্রলীগের সভাপতি বিলাশ ভাই আপনাকে চা খাওয়ার দাওয়াত দিছেন।’ তখন অভিযুক্ত সৌরভ তাঁকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে লালমনিরহাট সরকারি কলেজে নিয়ে যান। এভাবে নিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁকে রশি দিয়ে হাত ও পা বেঁধে ফেলেন। কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁর কাছে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিসের টাকা, জিজ্ঞাসা করতেই তাঁরা এলোপাতাড়ি মারধর করেন এবং পাঞ্জাবির পকেটে থাকা ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন।
লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, মারধরের এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী চাঁদার টাকা দিতে রাজি হন এবং তাঁর স্ত্রীকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন। এরপর রাশেদের নির্দেশমতো ওই ব্যবসায়ীকে আবার মোটরসাইকেলে তুলে শহরের ক্যানটিন মোড়ে ছাত্রলীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তাঁকে আরেক দফা মারধর শুরু করলে ওই ব্যবসায়ী ছাত্রলীগ নেতার পা ধরে মারধর না করতে অনুরোধ করেন। তখন রাশেদ তাঁকে দ্রুত টাকার ব্যবস্থা করতে বলেন এবং টাকা না দিলে মাদক দিয়ে পুলিশে তুলে দেওয়ার ভয় দেখান। এরপর বিকেল ৪টার দিকে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর ছেলে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে সেখানে এলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় রাশেদ তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আজকে তোকে প্রাণে ছেড়ে দিলাম, তুই যদি এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করিস বা আইনের আশ্রয় নিস, তাহলে তোকে সময়মতো পেলে প্রাণে শেষ করে দেব।’
তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ জামান চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই দিন (রোববার) দুপুরে সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক তাঁকে ফোন করে জানান, বহিরাগত ব্যক্তিরা কলেজে কাকে যেন ধরে এনেছে। হট্টগোল হচ্ছে। তিনি যেন সেখানে যান। এরপর তিনি কলেজে গিয়ে দেখেন, তাঁর পরিচিত ও এলাকার কিছু ছোট ভাই একজনকে কলেজে ধরে এনেছেন। তাঁরা নাকি ওই ব্যক্তির কাছে টাকা পান, কিন্তু তিনি টাকা দেন না। তখন তিনি তাঁদের কলেজের বাইরে অন্য কোথাও নিয়ে সমস্যার সমাধান করার কথা বলেন। এরপর তাঁরা লোকটাকে নিয়ে কলেজের বাইরে চলে যান। এর বাইরে তিনি কিছু জানেন না। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয়।
অভিযুক্ত অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে রায়হান ও তুষারের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও বন্ধ থাকায় তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে গরু ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ সভাপতি বিলাশ মনে করেছে, আমি ভারতীয় গরুর ব্যবসা করি। তাই ঈদকে সামনে রেখে লোকজন দিয়ে আমাকে আটক করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মোটরসাইকেলে তুলে কলেজে ও তার চেম্বারে নিয়ে মারপিট করে। মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছে। আমি অবৈধ গরুর ব্যবসায়ী হলে কি থানায় অভিযোগ করতাম? আপনারাই বিষয়টি ভালো বুঝতে পারবেন।’
সদর থানার ওসি মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ জামানের বিরুদ্ধে এ–সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।