রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার কিশোর ১৩ দিন পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৮ মিনিটে কারাগারের বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পায় সে।
এর আগে বেলা পৌনে একটার দিকে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল প্রথম আদালতের বিচারক মোস্তফা কামাল তাকে জামিনের আদেশ দেন। কিশোরের আইনজীবী আবদুল মোকছেদ বাহালুল প্রথম আলোকে ওই তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিকেল ৫টা ৮ মিনিটে কারাগারের প্রধান ফটক থেকে বেরিয়ে বাবার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে প্রধান সড়কে আসে ওই কিশোর। সেখানে সাধারণের অনুমতি ছিল না। প্রধান সড়ক থেকে ওই দৃশ্য দেখা যায়। প্রধান সড়কের পাশে আসার পরপরই ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা, বোনসহ স্বজনেরা। এ সময় হৃদয়বিদারক এক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় সড়কের পাশে উৎসুক জনতা ভিড় করেন।
কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় কিশোরকে খুবই বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। এ সময় ছররা গুলি কোথায় লেগেছে, জানতে চাইলে কিশোর শার্টের বোতাম খুলে বুকের মধ্যে ক্ষতচিহ্ন দেখায়। ক্ষতস্থান এখনো লাল হয়ে আছে। ওই দিনের ঘটনা জানিয়ে সে বলে, ‘মনে হলো কিছু একটা শরীরে বিঁধল। এরপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে দেখি, আমার হাতে হ্যান্ডকাফ। ওই জায়গা কোথায়, তা বলতে পারি না।’
ছেলের চিকিৎসার বিষয়ে কিশোরের বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে এখন বাসায় যাই, খাওয়া-দাওয়া ও গোসল করুক, বিশ্রাম নিক। এরপর সব বুঝেশুনে প্রয়োজন হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।’ এরপর একটি অটোরিকশায় কিশোরকে নিয়ে স্বজনেরা বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন।
এর আগে দুপুরে আদালতে কিশোরের জামিনের পর আইনজীবী আবদুল মোকছেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪ আগস্ট এই কিশোরের জামিন আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ সকালে তার আগাম জামিন শুনানির জন্য আদালতে আবেদন দেওয়া হয়। আদালত তা মঞ্জুর করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত কিশোরের জামিন মঞ্জুর করেন। তবে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি।’
আদালতে কিশোরের পক্ষে আবদুল মোকছেদ ছাড়াও রংপুর জজকোর্টের আইনজীবী জোবায়দুল ইসলাম, আবু তাহের আলী, রায়হান কবীর, রোকনুজ্জামান রোকন ও পলাশ কান্তি নাগ শুনানি করেন। এই আইনজীবীরা ওই কিশোরের জন্মসনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদালতের কাছে উপস্থাপন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শারমিন আফরোজ। তিনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এই কিশোর রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির (বিজ্ঞান বিভাগ) ছাত্র। জন্মসনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৬ বছর ১০ মাস। তবে মামলায় তার বয়স ১৯ বছর দেখিয়েছে পুলিশ। আজ প্রথম আলোর প্রথম পাতায় এ নিয়ে ‘রংপুরে কোটা আন্দোলন: আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কিশোর গ্রেপ্তার, ১২ দিন ধরে কারাগারে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরকে ১৯ জুলাই আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রংপুর মেট্রোপলিটনের তাজহাট আমলি আদালতে হাজির করা হয়ছিল। তখন আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।