নরসিংদীতে দ্বন্দ্বের জেরে তরুণকে কুপিয়ে হত্যা

আহাজারি করছেন নিহত তরুণের স্বজনেরা। রোববার নরসিংদীর শিবপুরে
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার দুই গ্রামের তরুণদের দ্বন্দ্বের জেরে তরুণকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার সাধারচর ইউনিয়নের মৈষাদী এলাকার হরিহরদী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত তরুণের নাম নাহিদ মিয়া ওরফে বাবু (১৯)। তিনি উপজেলার সাধারচর ইউনিয়নের তাতারকান্দী গ্রামের মো. আসাদ মিয়ার ছেলে। তিনি মৈষাদী এলাকার হরিহরদী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনিয়মিত শিক্ষার্থী। তিনি গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন।

নিহত নাহিদের পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চার মাস আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির স্কুলপড়ুয়া এক ছাত্রের সঙ্গে মৈষাদী এলাকার একদল কিশোরের ঝগড়া হয়। ফুটবল খেলায় মারামারি নিয়ে ওই ঝগড়া হয়েছিল। বড় ভাই হিসেবে ওই ঝগড়া মিটিয়ে দিতে গিয়েছিলেন নাহিদ ও তাঁর বন্ধুরা। কিন্তু ঘটনাটি মীমাংসা না হয়ে বিবাদ মৈষাদী ও তাতারকান্দী গ্রামের তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় মৈষাদী এলাকার ক্ষুব্ধ তরুণেরা নাহিদের এক বন্ধুর মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। এ নিয়ে দুই গ্রামের তরুণদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়।

আজ সকালে নাহিদ তাতারকান্দী গ্রামের বাড়ি থেকে এইচএসসির ফরম পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে মৈষাদী গ্রামের হরিহরদী স্কুল অ্যান্ড কলেজে যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কাছাকাছি পৌঁছার পর কয়েকজন তরুণ তাঁর পথরোধ করেন। এ সময় তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে নাহিদের দুই পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কোপানো হয়। এতে নাহিদ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ওই তরুণেরা তাঁকে চ্যাংদোলা করে পাশের নিচু জমিতে জমে থাকা পানিতে ফেলে দেন। পরে তাঁরা চলে গেলে স্বজন ও স্থানীয় লোকজন নাহিদকে উদ্ধার করে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত নাহিদ মিয়া

হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘শিবপুরের সাধারচর থেকে নাহিদ মিয়া নামের ওই তরুণকে মৃত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁর জামাকাপড় ভেজা ছিল এবং দুই পায়ের অন্তত চার জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাঁর মৃত্যুর কারণ ধারালো অস্ত্রের আঘাত নাকি অন্য কিছু, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে বলা যাবে।’

খবর পেয়ে শিবপুর থানার উপপরিদর্শক আবদুল হক হাসপাতালে গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন করেন। পরে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শিবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মেজবাহ উদ্দিন ও শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার।

ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, ফরম পূরণ করতে যাওয়া নাহিদকে পূর্বশত্রুতার জেরে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করেছেন স্থানীয় একদল তরুণ। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে দুই তরুণকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য নাহিদের লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।