সকালবেলা রাজশাহী বাস কাউন্টারে এসে দেখেন বাস নেই। এরপর কয়েকটি কাউন্টার ঘোরেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যান রাজশাহী নগরের কুমারপাড়া এলাকায় বিআরটিসি বাসের ডিপোর কাউন্টারে। সেখানে এসে দেখেন ডিপোই বন্ধ হয়ে আছে। এই যাত্রীর নাম হৃদয় হাসান। তিনি রাজশাহী নগরের উপকণ্ঠ নওহাটার বাসিন্দা। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘পরিবহন মালিক সমিতি ধর্মঘট ডেকেছে, সরকারি বিআরটিসির বাস বন্ধ হবে কেন? সরকার বাস ধর্মঘট দেয়, এমন খবর দুনিয়ার আর কোনো দেশে পাওয়া যাবে না। এমন ধর্মঘট তো সরকারের জন্যই ক্ষতির।’
চোখেমুখে হতাশা নিয়ে হৃদয় হাসানের চলে যাওয়ার পর ডিপোর প্রধান ফটক দিয়ে ভেতর প্রবেশ করতেই দেখা যায় সারি সারি বাস সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ডিপোর টিকিট কাউন্টারের দরজার ওপরে দুটি তালা ঝুলছে। বাইরে দুজন শ্রমিক বিআরটিসি বাস ধুয়েমুছে পরিষ্কার করছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁরা রাজি হননি। একজন শুধু বললেন, ‘বাস চালালে ক্ষতি হলে আপনি দেখবেন? আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলুন। আমরা এ নিয়ে কথা বলতে পারব না।’
মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করাসহ ১০ দফা দাবিতে গত শনিবার ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দেয় পরিবহন মালিক সমিতি। পরে সমিতির ১০ দফা দাবি পূরণের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারসহ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দেয় তারা। কোনো আশ্বাস না পেয়ে বুধবার বিকেলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় তারা।
বিএনপি বলছে, অন্যান্য গণসমাবেশের মতো রাজশাহীর গণসমাবেশে মানুষকে আসতে বাধা দিতে এই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তবে পরিবহন মালিক সমিতি বলছে, গণসমাবেশের সঙ্গে তাদের ডাকা ধর্মঘটের কোনো যোগসূত্র নেই। বিষয়টি ‘কাকতালীয়’।
শহরের তালাইমারী এলাকায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্টার থেকে যাত্রীসহ বিআরটিসির তিনটি বাস ছেড়ে যায় আজ। সকাল সাতটার দিকে পঞ্চগড়মুখী, আটটার দিকে দিনাজপুরমুখী ও নয়টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরের উদ্দেশে তিনটি বাস ছেড়ে যায়।
এই কাউন্টারের ইনচার্জ মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিআরটিসির যে তিনটি বাস রাজশাহী থেকে ছেড়ে গেছে, সেগুলো রাজশাহী অঞ্চলের ডিপোর নয়। এগুলো বাইরের থাকায় মালিক সমিতি এগুলো যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এতে কিছু যাত্রী নিয়ে বাসগুলো রাজশাহীর বাইরে চলে যাচ্ছে। কারণ, এগুলো এখানে থাকলে তাঁদের কয়েক দিন আটকে থাকতে হতো। তিনি আরও বলেন, মালিক সমিতির পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে তাঁরা পড়েন না। কিন্তু বাসের যদি কোনো ক্ষতি হয়, এ কারণে বিআরটিসির বাসও বন্ধ রাখা হচ্ছে। এই জন্য তাঁরা কয়েক দিন আগে থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রিও বন্ধ রেখেছেন।
রাজশাহী বিভাগে বিআরটিসির পাবনা ও বগুড়া ডিপো আছে। এই দুই ডিপো থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিআরটিসি বাস চলাচল করে। বগুড়া ডিপোর প্রধান মো. মনিরুজ্জামান বাবু প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল থেকে তাঁরা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। পরিবহন মালিক সমিতির ধর্মঘট ডাকার কারণে রাস্তায় কোনো বাস চলছে না। আবার যাত্রীও না আসার সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া রাস্তায় যাত্রী ও বাসের নিরাপত্তার ব্যাপারটিও আছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সরাসরি বিআরটিসি কর্তৃপক্ষকে বাস বন্ধ করতে বলেননি। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছেন।