ঘরের বেড়া ও চাল অনেকটা হেলে পড়েছে। বৃষ্টি হলে চালের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে একাকার হয়ে যায় ঘর। ঝড়ের দিনে ওই ঘর পড়ে গিয়ে ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা। এমন ঝুঁকিপূর্ণ ঘরেই বসবাস দুই ভাইয়ের। তাদের বাবা মারা গেছেন বছরখানেক আগে। মাস ছয়েক আগে মা-ও পাড়ি জমান না–ফেরার দেশে। এরপর অকূলপাথারে পড়ে দিশাহারা এই দুই কিশোর।
মা ও বাবাকে হারানো ওই দুই কিশোরের নাম মো. কায়সার ও আবদুল হামিদ। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও এলাকায়। কায়সার গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ও হামিদ শিকলবাহা পিডিবি উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। তাদের একমাত্র বোনের বিয়ে হয়েছে আগেই।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বাবা আবদুল গফুর (৫৭) গত বছর হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এর ছয় মাসের মাথায় অসুস্থ অবস্থায় মারা যান মা রেহেনা আক্তার (৪৫)। আর্থিক সংকটের মধ্যেও পড়াশোনা ছাড়েনি তারা। তাদের দুজনেরই স্বপ্ন পড়াশোনা করে একদিন বড় চাকরি করার।
সম্প্রতি কোলাগাঁও গ্রামে যান প্রথম আলোর এ প্রতিবেদক। সেখানে মো. কায়সার প্রথম আলোকে বলে, তার বাবা আবদুল গফুর চট্টগ্রাম বন্দরে শ্রমিকের কাজ করতেন। এতে কোনোভাবে তাদের সংসার চলত। পায়ে সমস্যার কারণে মৃত্যুর দুই বছর আগে থেকে তিনি ঠিকভাবে কাজ করতে পারতেন না। জমানো টাকাই খরচ করতে হতো। ২০২১ সালের ১৭ জুলাই মারা যান তিনি। এর মধ্যে ২০২০ সালে তার মা রেহেনা আক্তারের পরপর দুইবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। টানা চিকিৎসার মধ্যে ২০২২ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনিও মারা যান।
মো. কায়সার বলে, মা-বাবার মৃত্যুর পর তারা দুই ভাই চাচার পরিবারের সঙ্গে দুই বেলা খাওয়াদাওয়া করছে। মাটির ঘরটির চারদিকে ফাটল দেখা দিয়েছে। তিনটি কক্ষের মধ্যে দুটিতে বৃষ্টি পড়ে। ঝড়ে ভেঙে পড়ার শঙ্কা আছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে।
কায়সার জানায়, দুটি টিউশনি করিয়ে তিন হাজার টাকা বেতন পায় সে। সেই টাকা দিয়ে দুই ভাইয়ের পড়ালেখাসহ নানা খরচ চালাতে হয়। একজন চিকিৎসক তাকে এইচএসসির বইখাতা কিনে দিয়েছেন। কলেজে ভর্তির জন্য সহায়তা করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। তবে জীবন চালিয়ে নেওয়ার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, তা জোগাড় করতে সে হিমশিম খাচ্ছে।