নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় নবগঙ্গা নদীর ভাঙনে একের পর এক ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বিষ্ণুপুর এলাকায়
নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় নবগঙ্গা নদীর ভাঙনে একের পর এক ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বিষ্ণুপুর এলাকায়

‘এখন রাস্তায় রাস্তায় আছি, মানুষ যা দেচ্ছে তাই খাচ্ছি’

‘আমার একটা ৩৫ বন্দ (বন্দ হলো দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১ হাত) ঘর ছিল। ১৭ বন্দের গোয়াল ছিল। রান্নাঘর ও আরেকটা ছোট ঘরও ছিল। এই নবগঙ্গা নদী আমার সবকিছু নিয়ে গেছে। এখন আমি নিঃস্ব। ঘরে থাকা চাউল, ডাউল ও লেপ-কাঁথা কিছুই নিতে পারিনি। একবারে সবকিছু ডুবে চলে গেছে। আমার জায়গাজমি যা ছিল, সব চলে গেছে। নতুন করে ঘর ওঠানোর মতো জায়গা নেই। এখন রাস্তায় রাস্তায় আছি। মানুষ যা দেচ্ছে, তাই খাচ্ছি।’

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে কথাগুলো বলছিলেন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বৃদ্ধ রিলু ফকির (৭০)। সম্প্রতি বিষ্ণুপুর এলাকায় নবগঙ্গা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে রিলু ফকিরের জায়গাজমি ও ঘরবাড়ি।

রিলু ফকিরের ছেলে লিমন ফকির বলেন, জায়গাজমি যতটুকু ছিল, সবকিছু এবার নিয়ে গেছে নদী। অন্যরা মালামাল সরানোর সময় পেয়েছেন, তাঁরা সেটাও পাননি। মালামাল বের করার জন্য আধা ঘণ্টা সময়ও পাননি। সব নদীতে ভেঙে চলে গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিষ্ণুপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নবগঙ্গা নদীর পানি বেড়ে তীব্র স্রোত ও ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে ভাঙছে নদীপাড়। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে এ ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে এখন পর্যন্ত ওই এলাকার রিলু ফকির, জনি শেখ, মাহাবুর ফকির, মাকসুদ ফকির, সেলিনা আহমেদ, রুকি বেগম, জহুর সরদার, শহিদুল্লা মোল্লা, মাহদাদ শেখসহ অন্তত ১৫টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ ঘরে থাকা জিনিস কিছু সরিয়ে নিতে পেরেছে, আবার কেউ পারেনি।

সেলিনা আহমেদ নামের এক নারী বলেন, ঘরের জিনিস বের করতে করতে তাঁদের ঘরও নদীতে চলে গেল। কিছু বের করেছেন, আর কিছু নদীতে চলে গেছে। নিজেরা দৌড়ে পালিয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন। এখন তাঁদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।
রুকি বেগম বলেন, ‘নদীতে সব তলিয়ে যাচ্ছে দেখে, চুলায় থাকা ভাতের হাঁড়ি ফেলে রেখে দৌড় দিয়েছি। সব নিয়ে গেছে নদীতে। এরপর থেকে পরের বাড়ি রয়েছি। কেউ চারটা দিলে খাচ্ছি।’

সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব রিলু ফকির

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিষ্ণুপুর এলাকায় ভাঙন–আতঙ্কে রয়েছে আরও শতাধিক পরিবার। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বিলীন হবে তাঁদের ঘরবাড়ি, কবরস্থান, মসজিদ, পাকা সড়কসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাঁধ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।

নদীপাড়ের বাসিন্দা শাহাদাত সরদার বলেন, এর আগে কখনো ভাঙনের মুখোমুখি হতে হয়নি। এখন যে অবস্থা, যেকোনো সময় নদীগর্ভে চলে যেতে পারে সব। আতঙ্কে দিন কাটছে। সরকার যদি ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ করে দেয়, তাহলে তাঁরা বাঁচবেন, সম্পদ বাঁচবে।

মাহবুব হোসেন বলেন, তাঁরা বারবার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। গত বছর একবার নদী ভেঙেছে। এবারও একই অবস্থা। সরকার যদি স্থায়ীভাবে বাঁধের ব্যবস্থা না করে, এলাকার অন্তত ১০০ বাড়িঘর, মসজিদ-মন্দির সব নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) যশোর পানি উন্নয়ন সার্কেল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. সাবিবুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে সরেজমিনে গেছেন। কয়েকটি বাড়িঘর ইতিমধ্যে বিলীন হয়েছে। দ্রুত ভাঙন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে নদীপাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোয় স্থায়ীভাবে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে প্রকল্প নেওয়া হবে।