দাম না পেয়ে শত শত মানুষ ছাগলের চামড়া ফেলে গেছেন যশোরের রাজারহাট চামড়া মোকামে। শনিবারের হাটে বিক্রির আশায় সেই চামড়া কুড়িয়ে মোকামের শ্রমিকেরা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করছেন। ঈদের পরদিন আজ মঙ্গলবার রাজার হাট চামড়ার মোকামে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
যশোর অঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়ার হাট বসে রাজারহাটে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চামড়ার ক্রেতা-বিক্রেতারা এই মোকামে আসেন। গতকাল সোমবার কোরবানি ঈদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদের পরদিনই ছোট পরিসরে কেনাবেচা হয়। ব্যাপারীদের অনেকে হাটের পরিস্থিতি জানতে এদিন হাটে আসেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে হাটে গিয়ে দেখা গেছে, সুনসান নীরবতা। কয়েক ফড়িয়া গরুর চামড়া সাজিয়ে বসেছেন। কেউ কেউ চামড়ার লবণ মাখানোর কাজ করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি একেবারেই কম। হাটের বিভিন্ন স্থানে ছাগলের চামড়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।
হাটের শ্রমিক লিয়াকত খান বলেন, ‘গতকাল ঈদের দিন বিকেলে বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে হুজুররা ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে হাটে আসেন। প্রতিটা চামড়ার দাম ৫ থেকে ১০ টাকার বেশি কেউ বলেনি। এতে তাঁদের রিকশা ভাড়াও উঠছে না দেখে রাগে ক্ষোভে তাঁরা চামড়া হাটে ফেলে গেছেন। অন্তত হাজার খানেক ছাগলের চামড়া কাল পড়ে ছিল। সেখান থেকে ২০০ চামড়া কুড়িয়ে আজ লবণ মাখিয়ে রেখেছি। শনিবার হাটের দিন বিক্রির আশা রয়েছি।’
হাটের পরিস্থিতি দেখতে আসা মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী পল্লাদ চন্দ্র দাস বলেন, ‘৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে ৪৪টি গরু ও ৪০ টাকা দরে ৩০টি ছাগলের চামড়া কিনেছি। লাভ-লোকসান কী হবে, তা আগামী দিনের হাটের ওপর নির্ভর করছে।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের পর প্রথম দিনে গরুর চামড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা ও ছাগলের চামড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা প্রতিটা দরে হাটে বেচাকেনা হচ্ছে। চামড়া ব্যবসায়ী গাপল চাঁদ বলেন, ‘গ্রাম থেকে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে চামড়া কিনেছি। আজ বাজারে সেই চামড়া গড়ে প্রতিটার দাম বলছে ৬৫০ টাকা। অথচ চামড়া কেনা, লবণ মাখানো শ্রমিক খরচ মিলিয়ে যে টাকা বিনিয়োগ করেছি, তাতে লোকসান হচ্ছে।’
ব্যবসায়ী শাহ আলম খান বলেন, ‘২২ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করেছি। শুরুর দিকে ব্যবসা ভালো হলেও শেষ দিকে লোকসানে পড়ে যাই। কোম্পানির সিন্ডিকেট ও সরকারের নজরদারির অভাবে এককালের রপ্তানিমুখী চামড়াশিল্প এখন ধ্বংসের প্রান্তে।’ তিনি আরও বলেন, চামড়াশিল্প কোম্পানির মালিকেরা যেন টাকা দিয়ে চামড়া কিনতেই চান না। এ জন্যে বাজার মুক্ত করে দেওয়া দরকার। কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দিলে এই সিন্ডিকেট ভেঙে যেত। প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হতো। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
শাহ আলম চামড়ার ব্যবসা বাদ দিয়ে সম্প্রতি মুদিদোকান দিয়েছেন।