২০০৮ সালে শরিফুল ইসলামের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ১৯ লাখ ২২ হাজার টাকার। ব্যাংকে সঞ্চয় বলতে কিছু ছিল না, বরং ঋণ ছিল ৩০ লাখ টাকা। বাহন হিসেবে ছিল পুরোনো মোটরসাইকেল। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে দুই মেয়াদে সংসদ সদস্যের (এমপি) দায়িত্বপালনের পর পাল্টে গেছে সেই চিত্র।
শরিফুল ইসলামের হাতে এখন নগদ টাকাই আছে প্রায় এক কোটি। স্ত্রী-পুত্রের হাতে আছে আরও দুই কোটি টাকা। তিনি ঘুরে বেড়ান কোটি টাকার ল্যান্ডক্রুজারে। টিনশেড বাড়ির বদলে থাকেন দালানে।
শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাকে হারিয়ে বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি জাতীয় পার্টির (জাপার) মনোনয়নে বগুড়া–২ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। এসব নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে তাঁর আয় ও সম্পদবৃদ্ধির চিত্র পাওয়া গেছে। টানা প্রায় ১৫ বছর ধরে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতির পদেও আছেন তিনি।
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শরিফুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী মোহসিনা আক্তারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ১ কোটি ৫৯ লাখ ৭৮ হাজার ১১৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৮৯ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৮ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ করা হয়। ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ কমিশনের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলা দুটির তদন্ত চলছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শরিফুল ইসলাম কৃষি খাত থেকে আয় করতেন ৪০ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে যেটি ছিল দুই হাজার টাকা। এবার তিনি কৃষি থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা। ১৫ বছর আগে তিনি বাড়ি ও দোকান ভাড়া দিয়ে ২ হাজার টাকা পেতেন। এখন পান ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকেও তাঁর আয় দ্বিগুণ হয়ে সাত লাখে দাঁড়িয়েছে। শেয়ার-সঞ্চয়পত্র থেকে তিনি বছরে এখন ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আয় করেন, যা আগে ছিল না। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে সংসদ সদস্য হিসেবে পাওয়া ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার সম্মানী ভাতা। এবার তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাওয়ার তথ্যও উল্লেখ করেছেন, যা আগে ছিল না। সব মিলিয়ে এই সংসদ সদস্য বছরে এখন ৪১ লাখ ১৫ হাজার টাকা আয় করেন, যা ২০০৮ সালে ছিল মাত্র ৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
২০০৮ সালে শরিফুল ইসলামের ওপর নির্ভরশীলদের কোনো আয় ছিল না। এখন তাঁর ওপর নির্ভরশীলেরা আয় করেন ২৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। যার মধ্যে ব্যবসা থেকে আসে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৭ লাখ টাকা, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র থেকে আসে ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা এবং পেশা থেকে আসে ৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। পরিবারের সবাই মিলে এখন আয় করছেন ৭০ লাখ টাকার বেশি।
১৫ বছর আগে শরিফুল ইসলামের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ টাকার কিছু বেশি। এখন সেই সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ৮৯ হাজারে। তাঁর স্ত্রীর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজারে।
এবারের হলফনামায় শরিফুল নগদ ৯৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা থাকার কথা জানিয়েছেন। ২০০৮ সালে যেটি ছিল ১০ লাখ টাকা। ওই সময় তাঁর স্ত্রীর কাছে ছিল নগদ ৫০ হাজার টাকা। ১৫ বছরের ব্যবধানে যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৭ হাজারে ঠেকেছে। তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের (দুই ছেলে) হাতে আছে আরও ৯৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
শরিফুল ইসলামের এখন ব্যাংকে জমা আছে ৭২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, ২০০৮ সালে যা ছিল একেবারেই শূন্য। এ ছাড়া স্ত্রীর জমা আছে ৬২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, আগে যেটি ছিল দেড় লাখ। স্ত্রীর নামে এখন ২৮ লাখ টাকার স্থায়ী আমানতও হয়েছে।
শরিফুল ইসলাম এখন এক কোটি এক লাখ টাকা দামের গাড়িতে চড়েন। আগে চালাতেন ৭৭ হাজার টাকার মোটরসাইকেল। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ টাকা দামের ট্রাক রয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেড় লাখ টাকা মূল্যের একটি ৩২ বোরের পিস্তল এবং ১ লাখ টাকা মূল্যের ২২ বোরের একটি রাইফেলের কথা উল্লেখ করেছিলেন শরিফুল। এবার অস্ত্র থাকার কথা উল্লেখ করেননি।
শরিফুল ইসলাম ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ১ দশমিক ৪০ শতক কৃষিজমি থাকার কথা জানিয়েছিলেন। এখন তাঁর কৃষিজমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৯৩ দশমিক ২২ শতক, যার অর্জনকালীন মূল্য তিনি উল্লেখ করেছেন সাড়ে ৪৫ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে তাঁর স্ত্রীর ০ দশমিক ৭ শতক কৃষিজমি ছিল। এখন সেটি ১৫৬ শতকে দাঁড়িয়েছে, যার দাম ২৭ লাখ ১১ হাজার টাকা। শরিফুল অকৃষি জমির পরিমাণ উল্লেখ করেননি। তবে এর দাম উল্লেখ করেছেন ১০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
১৫ বছর আগে শরিফুল জানিয়েছিলেন, তাঁর একটি টিনশেড কাঁচা–পাকা বাড়ি রয়েছে, যার দাম ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এবার তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ২টি দালানবাড়ি রয়েছে, যার দাম ১ কোটি ৮৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা। ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকার একটি ফ্ল্যাট হওয়ার কথাও জানিয়েছেন শরিফুল।
২০১৪ সালে শরিফুল ইসলামের ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ টাকা। তাঁর নির্ভরশীলদের নামে কোনো ঋণ ছিল না। এবার শরিফুলের নিজ নামে ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখে। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক মহাস্থানগড় শাখাতেই আছে ৩০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। একই শাখা থেকে তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের ঋণ আছে আরও ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। মধুমতি ব্যাংক মতিঝিল শাখায় শরিফুল ইসলামের আরও ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকার ঋণ আছে।