কারখানায় তালা দেওয়ার পরদিন যুবদল নেতার বাড়িতে হামলা

হামলা চালানোর পর যুবদল নেতা ওমর হোসেনের বাড়ি। সোমবার বিকেলে রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল উত্তরপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে যুবদল নেতার কারখানায় তালা দেওয়ার পর এবার তাঁর বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট হয়েছে। হামলার সময় ওই যুবদল নেতার বাবা ও বোন মারধরের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে তাঁর গোলাকান্দাইল উত্তরপাড়ার বাড়িতে হামলার এ ঘটনা ঘটে।

যুবদলের ভুক্তভোগী নেতার নাম ওমর হোসেন গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। গতকাল রোববার দুপুরে তাঁর বরফ তৈরির কারখানায় তালা দেওয়া হয়। ৩০ ঘণ্টা পার হলেও আজ রাত আটটা পর্যন্ত কারখানার তালা খোলা হয়নি।

ওমর হোসেনের পরিবারের সদস্য এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়েছে। তাঁরা জানান, আজ বিকেল চারটার দিকে গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক কুরবান আলী, যুগ্ম সম্পাদক মো. সোহেল, এসহাক মিয়া, এলাকায় যুবলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত মো. বাবু, মো. কাউসার, ইউনিয়ন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত মাসুম বিল্লাহ, মো. ইমন, মেহেদি হাসানসহ প্রায় ১২ জন মোটরসাইকেলে করে ওমর হোসেনের বাড়িতে আসেন। এ সময় তাঁদের হাতে রামদা, রড, লাঠি ও হকিস্টিক ছিল। হামলাকারীরা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে ওমর হোসেনের বাড়ির বাইরে থাকা তাঁদের দুটি দোকানের শাটার ও বাড়ির জানালার কাচ ভেঙে ফেলা হয়। পরে তাঁরা ঘরে ঢুকে দুটি স্টিলের আলমারি, দুটি রেফ্রিজারেটর, একটি টেলিভিশন, চেয়ার, বিভিন্ন কক্ষের দরজা, বৈদ্যুতিক মিটার ভাঙচুর করেন।

হামলার সময় ওমর হোসেনের মা–বাবা, বোন ও ভাবি বাড়িতে ছিলেন। তাঁদের দাবি, আলমারি ভেঙে লুটপাটের সময় তাঁরা বাধা দিলে হামলাকারীরা ওমরের বোন বেলি বেগম ও তাঁর বাবা সেলিম ভূঁইয়াকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। বাড়িতে প্রায় ১৫ মিনিট তাণ্ডব চালানোর পর হামলাকারীরা একটি সোনার হার, ১৫ হাজার টাকা ও দুটি মুঠোফোন লুট করে নিয়ে যান।

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুবলীগ নেতা কুরবান আলী। এমন কোনো ঘটনার কথা একদমই শোনেননি বলে দাবি তাঁর। ওমরের এক স্বজন পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘ওরা আইসা দরজা জানালা ভাঙতে ভাঙতে ওমররে খুঁজছে। আমাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। তারা বারবার বলতেছিল, কারখানায় তালা দেওয়ার ঘটনা সাংবাদিকদের জানাইয়া ওমর ভুল কইরা ফেলছে।’

হামলার পর সন্ধ্যায় রূপগঞ্জ থানা–পুলিশের কয়েকজন ওমর হোসেনের বাড়ি পরিদর্শন করেছে। তারা ঘটনাস্থলের ছবি তোলে এবং স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে। হামলাকারীদের কাউকে তাঁরা চেনেন কি না, পুলিশের এমন প্রশ্নে ওমরের বাবা জানান, তিনি হামলাকারী কাউকে চেনেন না। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।

নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) আবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছে। আমরা তাদের অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলেছি। এ ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নিজের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই বারবার হামলার শিকার হচ্ছেন বলে দাবি ওমর হোসেনের। প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে গত এক বছরে তিনবার তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে বলে জানান তিনি। পুলিশের কাছে অভিযোগ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘বাবা পুলিশকে মিথ্যা বলেছেন। তিনি জানেন, পুলিশের কাছে হামলাকারীদের নাম বললে আবার হামলা হবে। এ ধরনের ফৌজদারি অপরাধে পুলিশ চাইলে নিজ থেকেই ব্যবস্থা নিতে পারে। আমাদের কেন অভিযোগ করতে হবে?’