নীলফামারীতে নিজ বাড়ি থেকে মা ও দুই মেয়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার পর আশিকুল হক মোল্লা গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আশিকুলের অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
গতকাল শুক্রবার সকালে জেলা সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নের দারোয়ানী বন্দর বাজার এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তহুরা বেগম (৩০), তাঁর মেয়ে আয়েশা আক্তার (১১) ও যারিনের (৬) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গলাকাটা অবস্থায় বাড়ির উঠান থেকে উদ্ধার করা হয় গৃহকর্তা কাঠ ও ফার্নিচার ব্যবসায়ী আশিকুল হক মোল্লাকে। তিনি চড়াইখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আবদুর রউফ মোল্লার ছেলে। ওই বাড়িতে আশিকুল হক স্ত্রী-সন্তাদের নিয়ে বসবাস করতেন।
আজ শনিবার সকালে আশিকুল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে সারি করে রাখা হয়েছে তিনটি খাটিয়া। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ এলে দাফনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন প্রতিবেশী ও স্বজনেরা। বাড়ির সামনে মোতায়েন করা হয়েছে গ্রাম-পুলিশ। মূল ফটকে ঝুলছে তালা। এলাকার অনেকে আসছেন, নীরবে তাকাচ্ছেন বাড়িটির দিকে।
আশিকুল হকের মামাতো ভাই ও নিকট প্রতিবেশী মোস্তাফিজুর রহমান (৪১) বলেন, প্রায় এক মাস আগে মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন আশিকুল। তখন তাঁকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। প্রায় তিন থেকে চার মাস আগে সৈয়দপুরে একজন মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে তাঁর চিকিৎসা করানো হয়। এর অনেক আগে রংপুরের এক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছেও চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর পরিবারে কখনো কোনো ঝগড়ার কথা শোনেননি মোস্তাফিজ।
একই বয়সের হওয়ার কারণে আশিকুলের সঙ্গে হৃদ্যতা ছিল বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, দুই দিন আগে আশিকুলের দোকানের সামনে স্বাভাবিক কথাই হয়েছে তাঁর। শুক্রবার সকালে স্ত্রীর চিৎকারে তাঁর ঘুম ভাঙে। বাড়ি থেকে বের হয়ে এ অবস্থা দেখার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। মোস্তাফিজুর বলেন, ‘আমি জানি আশিকুলের ১৮ লাখ টাকার একটা লোন (ঋণ) আছে। এখন সুদসহ কত হয়েছে, আমার জানা নেই। তবে ওই টাকার জন্য সে বেশি টেনশন করত। এ কারণে সে স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে আত্মহত্যার চেষ্টা করবে, এটা আমার কল্পনায় আসে না।’
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তানভিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় হত্যার শিকার তহুরা বেগমের ছোট ভাই মো. আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে গতকাল রাতে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। তিনজনের ময়নাতদন্ত শেষে আজ দুপুরে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। নীলফামারী সদর থানা-পুলিশের পাশাপাশি রংপুর সিআইডি মামলার তদন্ত করছে। আহত আশিকুল হক এখনো রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর জবানবন্দি গ্রহণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আবদুল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, আশিকুল হকের গলায় ছুরির আঘাতে রগ কেটে গেছে। তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য আলাদা নল করে দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে বুকে বাতাস জমে গেছে। সব মিলিয়ে তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর]