চট্টগ্রামে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের আটটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কারখানায় বন্ধের নোটিশ টাঙানো হয়। নোটিশ দেখে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ করেন কারখানা শ্রমিকেরা। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারও কারখানা চালু হওয়ার কথা বলে তাঁদের সান্ত্বনা দেন কর্মকর্তারা।
এস আলম গ্রুপের মানবসম্পদ ও প্রশাসনের প্রধান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনের সই করা নোটিশে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অনিবার্য কারণবশত আগামীকাল বুধবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারখানাগুলো বন্ধ থাকবে। তবে কারখানার নিরাপত্তা, সরবরাহ ও জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে।
বন্ধ ঘোষণা করা আটটি কারখানা হলো চিনি প্রক্রিয়াজাত কারখানা এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, ইস্পাতের পাত প্রক্রিয়াজাত কারখানা এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস ও ইনফিনিটি সি আর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢেউটিনসহ ইস্পাতপণ্য তৈরির কারখানা এস আলম স্টিল, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস নফ, চেমন ইস্পাত ও গ্যালকো স্টিল এবং ব্যাগ তৈরির কারখানা এস আলম ব্যাগ লিমিটেড। এ ছাড়া নিজস্ব কারখানার জন্য নির্মিত ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং এস আলম পাওয়ার জেনারেশনও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানাগুলোর মধ্যে শুধু গ্যালকো স্টিল ঢাকায় এবং বাকিগুলো চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে মইজ্জারটেক এলাকায় অবস্থিত।
আজ বেলা সাড়ে তিনটায় কর্ণফুলী উপজেলার কালারপুল এলাকায় এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক শ্রমিক কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করছিলেন। তাঁরা আকস্মিক নোটিশে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় পরিবার–পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়ার কথা বলেন।
এ সময় কারখানাটির নিরাপত্তা পরিদর্শক পরিচয়ে মোহাম্মদ ইউনুস নামের একজন বলেন, কথা বলার মতো কোনো কর্মকর্তা ভেতরে নেই, তাই ভেতরে যাওয়া যাবে না। যদিও কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের কারখানায় সবকিছু স্বাভাবিক চললেও আকস্মিক ছুটির নোটিশ দেওয়া হলো। কোন কারণে সাধারণ ছুটি দিয়ে দিল, জানি না। আমরা এ পরিস্থিতিতে আকাশ থেকে পড়লাম।’
এস আলম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে জানান, ব্যাংকের সহযোগিতা না পাওয়ায় কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। কাঁচামাল আমদানি করা না গেলে কারখানা চালু করার সুযোগ নেই। এ জন্য সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। তাঁরা জানান, কারখানাগুলোতে অন্তত ১২ হাজার কর্মী কাজ করেন।
কর্তৃপক্ষের অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটির ঘোষণার প্রতিবাদে কর্মীরা আগামী ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত কারখানার মালামাল খালাস থেকে বিরত থাকবেন বলে জানিয়েছেন। এরপর পরবর্তী করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আজ কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে ৯ দফা দাবিতে তাঁরা এ কথা জানান।
এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালে গ্রুপটি ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয়। তারপর ব্যাংকটি থেকে এস আলম গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ বের করে নেয়। ইসলামী ব্যাংক ছাড়া আরও কয়েকটি ব্যাংক দখল করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ টাকা বের করে নেয় গ্রুপটি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংককে এস আলমমুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে ১ হাজার ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত সপ্তাহে সাইফুল আলমের (এস আলম) ছেলে আহসানুল আলমসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।