বগুড়া জেলা কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদত আলম ওরফে ঝুনু মারা গেছেন। পুলিশের হেফাজতে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় নেওয়ার পথে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জে তাঁর মৃত্যু হয়। বগুড়া কারা কর্তৃপক্ষ ও পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
শাহাদত আলম বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর অধ্যক্ষ পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। জেলা আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলাসহ পাঁচটি মামলা ছিল। গত ২৫ আগস্ট রাতে বগুড়া শহরের মালতিনগর মোল্লাপাড়া এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেই থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।
কারাগার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে প্রথমে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় চিকিৎসকেরা জানতে পারেন, তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রাজধানীর জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। পুলিশি হেফাজতে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় নেওয়ার পথে সিরাজগঞ্জে তিনি মারা যান।
বগুড়া কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহাদত আলম অসুস্থবোধ করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, শাহাদত আলম হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে। অ্যানজিওগ্রামসহ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়।
শাহাদত আলমের সঙ্গে থাকা বন্ধু ফিরোজ হামিদ খান প্রথম আলোকে বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পুলিশের হেফাজতে অ্যাম্বুলেন্সে সড়কপথে ঢাকায় নেওয়ার পথে শাহাদতের অবস্থার অবনতি ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে সিরাজগঞ্জের এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয় পুলিশ। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষক সেলিম হোসেন (৩৫) নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১০১ জনকে আসামি করে তাঁর বাবা সেকেন্দার আলী ১৬ আগস্ট সদর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার এজাহারনামীয় ১০০ নম্বরের আসামি ছিলেন শাহাদত আলম। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এক রিকশাচালক নিহতের ঘটনায় করা আরেক মামলার আসামি ছিলেন তিনি। আর নিহত কমর উদ্দিনের স্ত্রী তহমিনা বেগমের করা আরেকটি মামলার ২৭ নম্বর আসামি ছিলেন শাহাদত আলম। পরে তাঁকে আরও দুটি মামলায় আসামি করা হয়।
সদর থানার উপপরিদর্শক আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্টের পর শাহাদত আলমের বিরুদ্ধে সদর থানায় তিনটি হত্যা মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা করা হয়। বগুড়া আদালতের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সর্বশেষ গত রোববার একটি মামলায় শাহাদত আলমকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।