পাথরাইলের মণ্ডপে তাঁতের শাড়িতে দুর্গা, লক্ষ্মী কাটছেন সুতা, বুনছেন কার্তিক, বিক্রি করছেন গণেশ

কার্তিক তাঁত বুনছেন, লক্ষ্মী চড়কায় সুতা কাটছেন, সরস্বতী শাড়ির নকশা করছেন। আর গণেশ শাড়ি বিক্রি করছেন। তাঁতশিল্পের আবহে সাজানো টাঙ্গাইলের পাথরাইলের বসাকপাড়ার মণ্ডপ
ছবি: প্রথম আলো

তাঁতের শাড়ির ‘রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত টাঙ্গাইলের পাথরাইলের বিভিন্ন পাড়ায় আয়োজন করা হয়েছে জাকজমকপূর্ণ দুর্গাপূজা। পাথরাইল বসাকপাড়ার পূজামণ্ডপ এবং সেখানকার প্রতিমায় তাঁতশিল্পের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা দৃষ্টি কেড়েছে দর্শনার্থীদের। জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন সেখানে।

টাঙ্গাইল শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দক্ষিণে দেলদুয়ার উপজেলায় পাথরাইলের অবস্থান। টাঙ্গাইল শাড়ির অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্র এটি। এ ইউনিয়ন হিন্দু সম্প্রদায়-অধ্যুষিত। তাদের বেশির ভাগই শাড়ি উৎপাদন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ইউনিয়নজুড়ে এবার ৪৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি পূজার আয়োজন করেছেন তাঁত ও শাড়িশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গত রোববার রাতে এবং গতকাল সোমবার দুপুরে পাথরাইলের বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে উৎসবের আমেজ। মণ্ডপগুলো থেকে ভেসে আসছে ঢাকের আওয়াজ ও সংগীতের মূর্ছনা। এতে ঢাকা পড়েছে তাঁতপল্লির তাঁতের খটখট শব্দ।

পাথরাইল বসাকপাড়া, চণ্ডী, নলশোদা, সূত্রধর পাড়া, বাজার, ঘোষপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার পূজামণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা এখানে পূজা দেখতে এসেছেন।

পাথরাইল বসাকপাড়ার পূজামণ্ডপে গিয়ে দেখা গেল, তাদের সাজসজ্জা, প্রতিমা—সবকিছুতেই তাঁতশিল্পের আবহ। মণ্ডপে দুর্গা প্রতিমাকে পরানো হয়েছে তাঁতের শাড়ি। কার্তিক তাঁতঘরে তাঁত বুনছেন। লক্ষ্মী চড়কায় সুতা কাটছেন। সরস্বতী বসে শাড়ির নকশা করছেন। পাশে গণেশ শাড়ি বিক্রি করছেন। দুর্গাদেবী অসুরের মাথায় চাপিয়ে দিয়েছেন শাড়ির বোঝা।

এই পূজার উদ্যোক্তাদের অন্যতম হচ্ছেন সুবীর কুমার বসাক। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকার বেশির ভাগ মানুষ তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাই দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে তাঁতশিল্পের আবহে। মাগুরা থেকে শিল্পী এনে এ প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা।’

টাঙ্গাইল শহর থেকে আসা বেনুরাজ দাস বলেন, পাথরাইল এলাকায় পূজার আয়োজন জমজমাট। তাই প্রতিবছর তিনি এখানে পূজা দেখতে আসেন। তপন কুমার ঘোষ নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, পাথরাইলের আয়োজন সব সময় অন্য জায়গার থেকে ভিন্ন হয়। এ জায়গার পূজা পুরো জেলার মানুষকে আকর্ষণ করে।

পাথরাইল বাজার বণিক সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, তাঁতের শাড়ির বাজার ভালো হওয়ায় কয়েক দশক ধরে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। তাই গত তিন দশক থেকে এখানে জমজমাট পূজার আয়োজন হচ্ছে। দিন দিন এ এলাকায় পূজার জৌলুশ বাড়ছে। বিভিন্ন স্থানের দর্শনার্থীরা এখানে আসেন পূজা দেখতে।

টাঙ্গাইল পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি আনন্দ মোহন দে বলেন, জেলার মধ্যে খুব জমজমাট আয়োজনে পাথরাইলে দুর্গাপূজা হয়। প্রতিবছর পূজার দিনগুলো উৎসব আমেজে মেতে থাকে পাথরাইল।