এ হাটে আলুর দাম ভালো। আর গ্রাম থেকে একদম কাছে এ হাট বসায় আলু আনা–নেওয়ার পরিবহন খরচও নেই। তাই কৃষকের লাভ থাকছে।
ছোট যমুনার দুই পাড়ে কয়েক শ বিঘা জমিতে চলছে কৃষকের ব্যস্ততা। কেউ নদীর জলে আলু ধুচ্ছেন, কেউ বস্তায় সেই আলু ভরছেন। আবার কেউ সাইকেল, ভ্যানগাড়ি বা ট্রলিতে বস্তা ওঠাচ্ছেন। সবার গন্তব্য নদী থেকে ৪০০ গজ দূরে আলুর পাইকারি বাজারে। সেখানে কয়েক শ আলুচাষি প্রতিদিন আগাম জাতের রঙিন আলো বিক্রি করছেন।
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার খট্টামাধবপাড়া গ্রামের তিনমাথা মোড়ে গড়ে উঠেছে এ রঙিন আলুর বাজার। বিরামপুর ও হাকিমপুর উপজেলার ২০-২৫টি গ্রামের আলুচাষিরা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ অস্থায়ী পাইকারি বাজারে আলু বিক্রি করছেন। কৃষকেরা বলেন, সাধারণত এ হাটে রোমানা, ক্যারেজ জাতের রঙিন আলুর কেনাবেচা হয়। তবে সাধারণ গ্যানুলা আলুও নিয়ে আসেন কৃষকেরা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ১০ জন আড়তদার প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার মণ আলু কিনছেন। আর কেনার পর এসব আলু ধোয়া, বস্তায় ভরা এবং গাড়িতে ওঠানোর কাজ করছেন প্রায় ১৫০ শ্রমিক। এ বাজারকে কেন্দ্র করে এখানে বসেছে জিলাপি, ডিম, শীতের রকমারি পিঠা, ঝালমুড়ি আর চায়ের দোকান। গত ডিসেম্বরের ১১ তারিখ থেকে বসেছে এ পাইকারি বাজার। চলবে আরও সপ্তাহখানেক।
আড়তদার জাহিদ ইকবাল রানা বলেন, এখানকার আলু প্রতিদিন রাজধানীসহ প্রায় ১৫টি জেলায় চলে যায়। ঢাকা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা স্থানীয় আড়তদারদের কাছ থেকে এসব আলু কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান।
স্থানীয় আড়তদারেরা বলেন, আলুর এ বাজার থেকে যা খাজনা আদায় হয়, তা গ্রামের পাঁচটি মসজিদের উন্নয়নের কাজে খরচ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আলুর বাজারের ১৫০ শ্রমিক দিন শেষে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা করে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, চলতি মৌসুমে অনেক জায়গায় আলুর ভালো দাম পাচ্ছেন না কৃষকেরা। তবে এ হাটে আলুর দাম ভালো। আর গ্রাম থেকে একদম কাছে এ হাট বসায় পরিবহন খরচও নেই। রোমানা জাতের আলু প্রতি মণ ৯০০ টাকা, ক্যারেজ ও গ্রানুলা আলু ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কেশবপুর গ্রামের আলুচাষি আবদুস বারী বলেন, চলতি মৌসুমে এই বাজারে তিনি রোমানা জাতের ১২৩ মণ আলু বিক্রি করেছেন।
বিরামপুরের হরিহরপুর গ্রামের আলুচাষি লোকমান হোসেন মিস্ত্রি বললেন, ‘আমি ১৪ মণ রোমানা জাতের আলু বিক্রি করলাম। জমিতে আলুর উৎপাদন ভালো এবং এ বাজারে আসার যোগাযোগও (রাস্তা) ভালো। সব মিলিয়ে এখানকার বাজার আমাদের জন্য অনেক ভালো।’
খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সদরুল শামীম বলেন, কৃষকেরা সরাসরি এ হাটে আলু বিক্রি করতে পারছেন। ফলে দামও ভালো পাচ্ছেন। আশা করছেন এখানকার আলুর বাজারটি পরের বছর আরও জমজমাট হবে।