চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় রাহেলা খাতুন (৭৬) নামে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত রাহেলার ছেলে ও এক মেয়েরজামাতা এ অভিযোগ করেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভাংবাড়িয়া গ্রাম থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত রাহেলার একমাত্র পুত্র সেলিম আহমেদ (৫০), পুত্রবধূ রিনা খাতুন (৪২) ও নাতি মো. সম্রাট হোসেনকে (২৫) আটক করেছে পুলিশ। আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম আহমেদ বলেছেন, বৃদ্ধ মাকে তাঁর স্ত্রী ও ছেলে মিলে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
রাহেলা খাতুন ভাংবাড়িয়া গ্রামের মৃত হুর আলীর স্ত্রী। বৃহস্পতিবার তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
নিহত রাহেলার ছোট মেয়ে সবুরন নেসার স্বামী (মেয়ের জামাতা) মঈনুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তাঁর শাশুড়ির একমাত্র ছেলে সেলিম আহমেদ ও ছেলের স্ত্রী-সন্তানেরা পাকা ঘরে থাকলেও অসুস্থ মাকে টিনের ছাপড়ায় অযত্ন–অবহেলায় রাখতেন। অসুস্থতার কারণে শয্যাশায়ী হওয়ায় ও বিছানা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মলমূত্রের ওপর শুয়ে থাকতেন রাহেলা। ঠিকমতো খেতে না দেওয়ায় তাঁর শাশুড়িকে অনেক সময় অভুক্তও থাকতে হতো। প্রতিবেশীরা খাবার দিতে এলে পুত্রবধূ রিনা খাতুন তাঁদের সঙ্গে ঝগড়া করতেন। ছেলের সঙ্গে রাহেলা খাতুন থাকলেও তাঁকে প্রায় প্রতিদিনই মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো। মঙ্গলবার রাতে সেলিমের সামনেই তাঁর স্ত্রী রিনা খাতুন ও ছেলে সম্রাট হোসেন লাঠিপেটা করেন রাহেলা খাতুনকে। এতে তাঁর কপালে জখম ও বাঁ হাতের কনুই ভেঙে যায়। এসব আঘাতের চিহ্ন পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে।
আলমডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল আলীম বলেন, নিহত নারীর বাঁ হাতের কনুই ভাঙা এবং কপালে জখমের চিহ্ন আছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রাহেলা খাতুন তিন কন্যা ও এক সন্তানের জননী ছিলেন। একমাত্র ছেলে সেলিম আহমেদের সঙ্গেই থাকতেন তিনি। বার্ধক্যের কারণে প্রায়ই মেয়েরজামাতারা এসে খোঁজ খবর নিতেন। বুধবার বেলা ১২টার দিকে ছোট মেয়েরজামাতা মঈনুল ইসলাম শাশুড়ির খোঁজ নিতে এসে জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা-পুলিশের একটি দল এসে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন করে লাশটি সন্ধ্যায় থানায় নিয়ে যায়।
আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, চাঞ্চল্যকর বিষয়টি জানার পর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান লালন সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। নিহত নারীর ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতিকে আটক করা হয়েছে। তিন মেয়ে ও মেয়েরজামাতাদের ডেকে আনা হয়েছে। রাতেই মামলার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।