রাত পোহালে আগামীকাল মঙ্গলবার নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমজমাট ভোট আশা করছেন ভোটাররা। নির্বাচনে যাচাই-বাছাইয়ের পর চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রার্থী থাকলেও ভোটের মাঠে আছেন কেবল দুজন। তাঁরা হলেন নোয়াখালী-২ (সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের ছেলে সাইফুল আলম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর। আবু জাফর মেয়াদে সেনবাগ পৌরসভার মেয়র ছিলেন।
বাকি চার প্রার্থীর কেউ নিজ থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন, কেউ সংসদ সদস্যের ছেলে সাইফুল আলম আবার কেউ আবু জাফরকে সমর্থন দিয়েছেন। ফলে এই উপজেলায় ভোটের লড়াই হচ্ছে সংসদ সদস্যের ছেলে সাইফুল আলমের সঙ্গে আবু জাফরের। আবু জাফরের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ রয়েছে। এ কারণে ভোটে এবার সাইফুল আলম ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। নির্বাচনে প্রচারণার সময় দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর সমর্থকদের মধ্যে বড় কোনো সংঘাতের ঘটনা না ঘটলেও সংসদ সদস্যের ছেলে প্রার্থী থাকায় ভোটের দিন কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং সংঘাতের আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে যত ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন, সবই নেওয়া হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সেনবাগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আটজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ে তাঁদের সবার মনোনয়ন বৈধ হয়। পরবর্তী সময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে দুই প্রার্থী-বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শিহাব উদ্দিন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। বাকি ছয়জন প্রার্থীর পাঁচজনই আওয়ামী লীগ–সমর্থক। তাঁরা সবাই প্রতীকও বরাদ্দ পেয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল আলম ছাড়া বাকি চারজন প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান সভাপতি-সম্পাদক ছিলেন তিনজন। তাঁদের মধ্যে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর আলম ওরফে লায়ন মানিক প্রার্থী হলেও তিনি ‘সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায়’ নির্বাচনের প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তিনি কাউকে সরাসরি সমর্থন জানাননি। একইভাবে প্রার্থী হয়েও নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত রয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জাফর আহম্মদ চৌধুরী।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এ কে এম জাকির হোসাইন প্রার্থী হয়ে প্রতীক বরাদ্দ পেলেও তিনি কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণায় নামেননি। বাকি একজন হলেন আবু জাফর ওরফে টিপু। তিনিই শেষ পর্যন্ত এমপিপুত্র সাইফুল আলমের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন। তাঁর প্রতীক দোয়াত-কলম। আর এমপিপুত্র সাইফুলের প্রতীক আনারস। আবু জাফরের সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে এমপিপুত্রের বিপক্ষে মাঠে নেমেছেন উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ।
দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের গ্রামের বাড়ি সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নে। নাটেশ্বরসহ সোনাইমুড়ী উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও সেনবাগ উপজেলা নিয়ে নোয়াখালী-২ আসন। ‘বহিরাগত’ বিতর্ক এড়াতে মোরশেদ আলম সেনবাগের ভোটার হয়েছেন আগেই। একইভাবে এবার উপজেলা নির্বাচনে ছেলে সাইফুল আলমকে প্রার্থী করার জন্য তাঁকেও সেনবাগের ভোটার করা হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী আবু জাফর সেনবাগ পৌরসভার বাবুপুর গ্রামের বাসিন্দা। শৈশব থেকেই তিনি সেনবাগে বেড়ে উঠেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও জাহাঙ্গীর আলম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী হয়েও ভোটের প্রচারণায় না থাকায় তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবু জাফরের পক্ষে ভোট করছেন। এতে করে ভোটের মাঠে লড়াইটা হচ্ছে মূলত সংসদ সদস্যের ছেলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের।
ভোটের প্রচারণার বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য সংসদ সদস্যের ছেলে ও আনারস প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। প্রত্যেকবারই ফোন ধরেন তাঁর এক আত্মীয়। প্রার্থী প্রচারে ব্যস্ত আছেন বলে ওই আত্মীয় জানান। তবে দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী আবু জাফর কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। তিনি বলেন, সেনবাগ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের দলীয় নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ এবং সাধারণ ভোটাররা তাঁর পক্ষে। কারণ, তাঁরা বহিরাগত কাউকে নির্বাচিত করতে চান না। চান সেনবাগের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে তাঁকে বিজয়ী করতে। সুষ্ঠু ভোট হলে তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের কোনো আশঙ্কার কারণ নাই বলে নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এর আগে জেলার সুবর্ণচরের ভোট নিয়েও অনেকের অনেক শঙ্কা ছিল। প্রশাসনের অবস্থান ছিল কঠোর। সেনবাগেও একই অবস্থান থাকবে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। কোনো প্রার্থীর লোক কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ পাবেন না। কেউ চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।