বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়াহাট সেতু ভেঙে একটি মাইক্রোবাস নদীতে পড়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯। আজ শনিবার বেলা দেড়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে দুর্ঘটনায় নিহত ৯ জনের লাশ উদ্ধার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন রুবিয়া আক্তার (৪৫), রাইতি (২২), ফাতেমা বেগম (৫৫), জাকিয়া বেগম (৩৫), রুকাইয়াত ইসলাম (৪), তাহিয়া মেহজাবিন আজাদ (৭), তাসফিয়া (১৪), ঋধি (৪) ও শাহনাজ আক্তার (৩৫)। তাঁদের মধ্যে রুকাইয়াত ইসলাম ও জাকিয়া বেগমের বাড়ি আমতলী উপজেলার দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামে। আর অপর সাতজনের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কোকরার চর গ্রামে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন হলেন কনের মামাবাড়ির স্বজন মাদারীপুরের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার ও তাঁর দুই মেয়ে তাসফিয়া ও তাহিয়া মেহজাবিন।
নিহত ব্যক্তির পারিবারিক সূত্র জানায়, আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহর মেয়ে হুমায়রা আক্তারের সঙ্গে গতকাল শুক্রবার আমতলী পৌর এলাকার বাসিন্দা সেলিম মাহমুদের ছেলে সোহাগ মিয়ার বিয়ে হয়। আজ শনিবার দুপুরে বরের বাড়িতে বউভাত অনুষ্ঠান ছিল। কনের পক্ষের লোকজন মাইক্রোবাস ও একটি ইজিবাইকে বউভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। বেলা দেড়টার দিকে মাইক্রাবাস ও ইজিবাইকটি দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া-হলদিয়াহাট এলাকায় চাওড়া নদীর ওপর সেতু পার হচ্ছিল। মাঝামাঝি আসতেই সেতুটি ভেঙে গেলে এতে মাইক্রোবাস ও ইজিবাইকটি নদীতে ডুবে যায়।
এ সময় ইজিবাইকে থাকা যাত্রীরা সাঁতরে কিনারে উঠতে পারলেও মাইক্রোবাসের যাত্রীরা নদীতে তলিয়ে যান। তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকজন ওই মাইক্রোবাসে থাকা লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চালান। খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা সদর থেকে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের দুটি দল দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। পরে মাইক্রোবাসে থাকা কনেপক্ষের ৯ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশগুলো আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম ও নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মাইক্রোবাস ও ইজিবাইকটি মাঝ বরাবর আসতেই সেতুটি ভেঙে পড়ে। এতে মাইক্রোবাস ও ইজিবাইকটি নদীতে পড়ে যায়। তাৎক্ষণিক আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চালাই। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ এসে উদ্ধারকাজে অংশ নেয়।’
মাইক্রোবাসে থাকা কনেপক্ষের স্বজন সোহেল মিয়া বলেন, ‘মাইক্রোবাসে আমরা কনেপক্ষের ১৬ জন যাত্রী বরের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। পথে হলদিয়া হাট সেতু পার হওয়ার সময় সেটি ভেঙে যায়। এতে মাইক্রোবাস ও ইজিবাইকটি নদীতে পড়ে যায়। নদীতে পড়ে যাওয়ার পর আমরা বের হওয়ার চেষ্টা চালাই। কিন্তু দরজা খুলতে পারিনি। পরে মাইক্রোবাসের জানালার কাঁচ ভেঙে আমরা কয়েকজন অনেক কষ্টে বের হতে পারলেও বেশির ভাগই ভেতরে আটকা পড়ে।’
এ বিষয়ে আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিরা বেঁচে আছেন। এখন আর কেউ নিখোঁজ নেই। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ঘটনার পর বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার (টুকু), জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলামসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুর্ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা উদ্ধার কার্যক্রম তদারক করেন।
সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, মূলত চাওড়া ও হলদিয়া দুই ইউনিয়নের সংযোগ সড়কের এ সেতুটি ভারী যান চলাচলের উপযোগী নয়। তা ছাড়া কয়েক বছর আগে থেকেই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। মূলত এ জন্যই এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এখানে ভারী যান চলাচলের সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।