মাদারীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ

মাদারীপুর–৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থকদের ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আজ রোববার বিকেলে সদর উপজেলার ঘটকচর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুর-৩ আসনের নৌকা ও ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন। ভোটকেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আজ রোববার দুপুরে সদর উপজেলার ঘটকচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের কয়েকটি ঘরে অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সকালে মাদারীপুর-৩ (সদর একাংশ, কালকিনি, ডাসার) আসনের ঘটকচর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের সমর্থক আকবর মাতুব্বর প্রথমে ভোট দিতে ভোটারদের বাধা দেন বলে অভিযোগ ওঠে। তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের তাহমিনা বেগমের সমর্থক আফজাল মুনশি। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা যায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্রের সামনে জড়ো হর। পরে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন চারজন। এ সময় ভোটকেন্দ্র দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকেরা।

খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ভোটারদের মধ্যে। পরে বেলা দুইটার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন পুনরায় দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘটকচর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের কেন্দ্রের পাশে জড়ো হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় ওই এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেন নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা। এতে ছয়জন আহত হন। খবর পেয়ে আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই সময় হাওয়া বেগম, নাজমা বেগমসহ তিনজনের বসতঘর ভাঙচুর করা হয়।

মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটকচর এলাকায় ১০–১৫টি ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে দুর্বৃত্তরা তাঁদের ওপরও হামলা চালায়। পরে প্রশাসনের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটের সদ্যসরা প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সামীম আহমেদ বলেন, ‘নৌকা নৌকা বলে ৫০ থেকে ৬০ জন একত্রে এসে ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের ঘরে হামলা চালান। এ সময় কয়েকটি রান্নাঘর ও বসতঘরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তিনটি বাড়িতে ভাঙচুরসহ লুটপাটও করেন তাঁরা। এ ঘটনার পর আমরা আতঙ্কে আছি।’

মাদারীপুর–৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সর্মকদের বসতঘর ভাঙচুর করা হয়। রোববার বিকেলে সদর উপজেলার ঘটকচর এলাকায়

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত গৃহবধূ হাওয়া বেগম বলেন, ‘আমার গোয়ালঘরে আগুন ধরিয়ে গরু নিয়ে গেছে গোলাপের লোকজন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

হামলায় আরেক ক্ষতিগ্রস্ত নাজমা বেগম বলেন, ‘হঠাৎ কয়েকজন এসে নৌকা নৌকা বলে আমার বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। রান্নাঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল হাসান বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় সেনবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। এ ছাড়া এই আসনে জাতীয় পার্টির মো. আবদুল খালেক, তৃণমূল বিএনপির প্রবীণ হালদার, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির নিতাই চক্রবর্তী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী নকুল কুমার বিশ্বাস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে ভোটকেন্দ্রে তাঁদের কোনো পোলিং এজেন্ট দেখা যায়নি।

কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং মাদারীপুর সদরের ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৬ জন। এখানে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৩ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৯৬০ জন। এ ছাড়া হিজড়া ভোটার তিনজন।