গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সড়ক প্রশস্ত করার নামে নির্বিচার দেড় শতাধিক গাছ কাটা শুরু করেছেন ঠিকাদারের লোকজন। যদিও প্রশাসন বলছে, সড়কের কাজের জন্য কাউকে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়নি। রাস্তায় ছায়াশীতল পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা পালনকারী এসব গাছ নির্বিচার কাটার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার বক্তারপুর থেকে কালামপুর হয়ে সিনাবহ বাজার এলাকা পর্যন্ত একটি রাস্তা চলে গেছে। আঞ্চলিক এই সড়কের দুই পাশে শত শত ছায়াদানকারী গাছপালা রয়েছে। রাস্তা আগে থেকেই প্রশস্ত থাকলেও কার্পেটিং করা ছিল মাত্র ১২ ফুট। এ ছাড়া সড়কটি ভাঙাচোরা অবস্থায় ছিল।
সম্প্রতি সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত করে নতুন করে কার্পেটিং করার জন্য দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কাজটি পায় হামজা এন্টারপ্রাইজ। এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সড়কটি শুরুতে ৩০০ মিটার আরসিসি ঢালাই দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২ হাজার ৭৮০ মিটার সড়ক ১৮ ফুট প্রশস্ত করে কার্পেটিং করা হবে।
সড়ক প্রশস্ত করার জন্য কোনো ধরনের গাছ কাটার নির্দেশনা না থাকলেও সড়কের দুই পাশে বড় বড় শাল, গজারি, আম, কাঁঠালসহ কাঠজাতীয় বিভিন্ন গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। উপজেলার কালামপুর এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে ছায়াদানকারী তরতাজা গাছগুলো কাটা হলো কোন যুক্তিতে, তিনি বুঝতে পারছেন না। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দীর্ঘদিনের পুরনো গজারি গাছও রয়েছে। কাটা গাছ ও গাছের ডালপালা দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কালামপুর এলাকায় সড়কের দুই পাশে এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি খুঁড়ে গর্ত করা হচ্ছে। পরে সেগুলো ইটের খোয়া ও বালু দিয়ে শক্ত করার কাজ চলছে। সেখান থেকে একটু এগিয়ে গেলেই দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশের বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। অনেক গাছ আগেই কেটে রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। দ্রুত এসব গাছ সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার কাজও চলছে।
গাছ কাটার দায়িত্বে নিয়োজিত শ্রমিকেরা বলেন, তাঁরা শুনেছেন রাস্তা বড় হবে। সে জন্য যেভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেই অনুযায়ী তাঁরা গাছ কাটছেন। গাছগুলো পরে ছোট ছোট টুকরা করে স মিলে নিয়ে যাওয়া হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হামিম এন্টারপ্রাইজের কাজটি দেখভাল করছেন মহিবুল্লাহ রাজু। মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলজিইডির কর্মকর্তা যেভাবে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন, সেভাবেই কাজ হচ্ছে। গাছ কাটার বিষয়ে তাঁদের কোনো হাত নেই বা তাঁদের কোনো প্রয়োজনও নেই।
এ বিষয়ে এলজিইডির কালিয়াকৈর উপজেলা প্রকৌশলী বিপ্লব পাল প্রথম আলোকে বলেন, কালামপুর হয়ে সিনাবহ সড়কটি আঞ্চলিক সড়ক হলেও এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্ব বিবেচনা করে সড়কটি প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সড়কটির দুই পাশে আগে থেকেই জায়গা বেশি আছে। তাই প্রশস্ত করার জন্য কোনো ধরনের গাছ কাটা যাবে না। গাছ কাটার নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি। গাছ কাটার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ রাস্তার পাশের গাছ কাটার বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।