শ্রমজীবী আসাদ আলী (৫৫) খেতখামারে কাজ করে চার সদস্যের সংসার চালান। মজুরির টাকায় বর্তমান বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। এর মধ্যে মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়। বাধ্য হয়ে ১০ কাঠা জমি বন্ধক রেখে আবদুল আজিজ নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে সুদের ওপর ৮০ হাজার টাকা নেন। ২ বছরে লাভের ২০ হাজার টাকাসহ আসলের ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন আসাদ আলী।
এরপর আরও এক বছর পার হওয়ায় সুদের ১০ হাজার টাকা ও আসল ৫০ হাজার টাকা আদায় করতে আসাদ আলীকে তুলে নিয়ে যান আবদুল আজিজের লোকজন। বাড়িতে শিকলে বেঁধে রেখে তাঁর ওপর চলে নির্যাতন। আসাদ আলীর বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া গ্রামে। আবদুল আজিজের বাড়ি পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ঈশ্বরপুর গ্রামে। গতকাল শনিবার এ ঘটনা ঘটে।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোয়ারুজ্জামান বলেছেন, লিখিত অভিযোগ না পেলেও সংবাদকর্মীদের কাছে খবর পেয়ে প্রথমে আসাদের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে আজ রোববার ভোরে আজিজের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আজিজকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। আসাদের স্ত্রী শাহানারা বেগমও এ সময় থানায় অবস্থান করছিলেন। এ ঘটনায় মামলা হবে।
গতকাল বিকেলে আজিজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুদের টাকা আদায়ের জন্য আসাদের কোমরে শিকল পেঁচিয়ে বারান্দার একটি খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে আসাদ বলেছেন, স্ত্রী-সন্তানদের সামনে থেকে টেনেহিঁচড়ে তাঁকে প্রায় চার কিলোমিটার হাঁটিয়ে আজিজের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। এখানে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে। দুপুর গড়িয়ে গেলেও খাবার দেওয়া হয়নি। উপরন্তু মাঝেমধ্যে এসে চড়থাপ্পড় মেরে ভয় দেখানো হচ্ছে। টাকা না পেলে হাত-পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন আজিজ।
আসাদের সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে বিয়ে করে পৃথক সংসার করছেন। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আসাদের স্ত্রী শাহানারা বেগম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামীকে দিনভর শিকলে বেঁধে নির্যাতনের খবরে টাকার জন্য অনেক জায়গায় ধরনা দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। লজ্জা ফেলে আজিজের বাড়িতে গিয়ে হাতে-পায়ে ধরে সময় প্রার্থনা করেও স্বামীকে ছাড়িয়ে আনতে পারেননি। তাঁর স্বামী অনেক কষ্ট পেলেও মন গলছে না আজিজের। গ্রামের মানুষও সহযোগিতা করছেন না। থানা-পুলিশের আশ্রয় নেওয়ার চিন্তা নেই বলে জানান শাহানারা বেগম।
জানতে চাইলে গতকাল বিকেলে আবদুল আজিজ বলেছিলেন, নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে টাকা নিয়েছিলেন আসাদ। অনেক তাগাদা দেওয়ার পরও টাকা পরিশোধ করেননি তিনি। পাওনা টাকা আদায় করতেই বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। তবে নির্যাতন করা হয়নি, টাকা পেলেই ছেড়ে দেওয়া হবে।
স্থানীয় লোকজন জানান, আজিজ পেশাদার সুদের কারবারি। গ্রামের মানুষ টাকার সংকট পড়লে জমি বন্দক রেখে টাকা নিয়ে থাকেন আজিজের কাছ থেকে। গত বছর এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন কমপক্ষে তিন ব্যক্তি। আজিজের দাপটে গ্রামের সাধারণ মানুষ প্রতিবাদের সাহস পান না।