পঞ্চগড়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ৫ মামলা, মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন

পঞ্চগড়ে পুলিশ–বিএনপি সংঘর্ষ চলাকালে শহরের সিনেমা রোডে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা
 ছবি: রাজিউর রহমান

পঞ্চগড়ে বিএনপির গণমিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচটি মামলা করেছে পুলিশ। আজ রোববার সকালে সদর থানার পাঁচজন উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলামসহ ৮১ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করে পৃথক পাঁচটি মামলা করেন।

মামলায় সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি ও বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলায় ইতিমধ্যে বিএনপি-জামায়াতের আটজন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন পঞ্চগড় জেলা ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা কানন (২৮), বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম ইউনিয়ন যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক রাজু আহমেদ (৩০), তেঁতুলিয়া উপজেলার জামায়াত কর্মী মো. জয়নাল (৪০) ও সাইফুল ইসলাম (৬৫), দেবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মেহেদী হাসান (৩৫), বিএনপির সমর্থক রেজাউল ইসলাম (৪৫), আটোয়ারী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান আতা ও বিএনপির কর্মী সিদ্দিকুল ইসলাম (৩৫)।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

পুলিশ, বিএনপির নেতা-কর্মী ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণমিছিলের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। বেলা আড়াইটার দিকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন দলটির নেতা-কর্মীরা। সড়কে মিছিল বের করার সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়ান। একপর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা করে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকলে পুলিশ দফায় দফায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় শহরের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং মানুষ দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।

এদিকে পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষের সময় আবদুর রশিদ আরেফিন (৫০) নামের বিএনপির এক নেতা নিহত হয়েছেন বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। নিহত আবদুর রশিদ বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি ওই ইউনিয়নের পাথরাজ চন্দনপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

তবে পুলিশের দাবি, ওই ব্যক্তি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যাননি। তিনি হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকে মারা গেছেন। আগে থেকেই তিনি হৃদ্‌রোগ আক্রান্ত ছিলেন এবং তাঁর তিনটি বাইপাস সার্জারি করা ছিল।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তৌফিক আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্তের সময় আবদুর রশিদের বাঁ পায়ের গোড়ালিতে ঘষা লাগার দাগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে তাঁর বুকে ওপেন হার্ট সার্জারির পুরোনো দাগ ছিল। এ ছাড়া তাঁর শরীরের অন্য কোথাও তেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পঞ্চগড়ে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যাওয়া আবদুর রশিদের ছেলে আবদুল্লাহ আল মাহী

এদিকে গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে স্বজনদের উপস্থিতিতে সদর হাসপাতালের মর্গে লাশের সুরতহাল করে পুলিশ। আজ দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকেল সাড়ে চারটায় বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের হরিপুর জোতদেবী কান্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

জানাজায় বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। এ ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জানাজায় ছিলেন।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিএনপির শান্তিপূর্ণ গণমিছিল কর্মসূচি ছিল। নেতা-কর্মীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছিলেন। নেতা-কর্মীদের হাতে লাঠি বা অন্য কোনো কিছুই ছিল না। সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলে কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা অতর্কিত হামলা চালান।

ফরহাদ হোসেন আজাদ আরও বলেন, ‘পুলিশের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেলের কারণে আবদুর রশিদ শহীদ হয়েছেন। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এখন যাঁরা পুলিশের হামলায় মারা যাচ্ছেন, তাঁরা নাকি হার্ট অ্যাটাকে মারা যাচ্ছেন। পুলিশ নতুন একটি কৌশল বের করেছে।’ তিনি বলেন, সারা দেশের মতো পঞ্চগড়েও পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মামলা করছে। কিন্তু মামলা-হামলা করে বিএনপির ন্যায্য দাবির আন্দোলন দমানো যাবে না।

পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চিকিৎসকদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। এ ছাড়া হার্ট অ্যাটাক করে পড়ে যাওয়ায় তাঁর পা ছিলে যাওয়ার মতো সামান্য দাগ পাওয়া গেছে।’