সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে মাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এক যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন গ্রামবাসী। উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের বাবুপুর গ্রামে ওই যুবককে আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে হাত-পা শিকলে বাঁধা অবস্থায় থানায় নিয়ে এসে তাঁকে পুলিশে দেওয়া হয়।
ওই যুবকের নাম কাজিরুল ইসলাম (২৭)। তিনি বাবুপুর গ্রামের মৃত আবদুর রাজ্জাক ও হেলেনা খাতুন দম্পতির ছেলে।
ধর্মপাশা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম কবির ঘটনাটি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, কাজিরুলের বিরুদ্ধে চুরির ঘটনায় থানায় একটি মামলা রয়েছে। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় যেকোনো সময় ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটাতে পারেন, সেই আশঙ্কায় তাঁকে ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বেলা তিনটার দিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আমার ছেলে নেশা করার জন্য আমার কাছে ২০০ টাকা চেয়েছিল। টাকা দিতে অস্বীকার করায় সে ধারালো দা দিয়ে আমার গলায় কোপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। পরিবারের লোকজন এগিয়ে এসে আমাকে প্রাণে রক্ষা করেছে। তাই নিরুপায় হয়ে আমি গ্রামবাসীকে নিয়ে চেয়ারম্যানের সহায়তায় ছেলেকে পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছি।হেলেনা খাতুন, কাজিরুলের মা
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাজিরুল দীর্ঘদিন ঢাকায় ছিলেন। দেড় মাস আগে তিনি বাড়িতে আসেন। তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। মাদকের টাকা না পেলে নিজের মা, ভাই ও এলাকার শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষজনকে তিনি মারধর করতেন। তাঁকে ভালো করার চেষ্টায় পরিবারের লোকজন দু-তিনবার তাঁর হাত-পা বেঁধে রেখে শাস্তিও দিয়েছিলেন। কিন্তু এতে কাজ হয়নি। মাদকের টাকা না পেলে বিভিন্ন বাড়ির হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন জিনিস চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করে দিতেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কাজিরুল মাদক সেবনের জন্য তাঁর মা হেলেনা খাতুনের (৫৩) কাছে ২০০ টাকা চান। টাকা দিতে না চাওয়ায় তিনি ধারালো দা দিয়ে মাকে কোপাতে উদ্যত হন। পরিবারের লোকজন এগিয়ে এসে হেলেনা খাতুনকে রক্ষা করেন।
পরে পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসী কাজিরুলের হাত ও পা লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে ঘরে আটকে রাখেন। ঘটনাটি তাৎক্ষনিকভাবে সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানাকে মুঠোফোনে জানান এলাকাবাসী। পরে কাজিরুলকে তাঁর মা ও এলাকার লোকজন আজ বেলা ১১টার দিকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় থানা-পুলিশের হাতে তাঁকে তুলে দেন।
হেলেনা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে নেশা করার জন্য আমার কাছে ২০০ টাকা চেয়েছিল। টাকা দিতে অস্বীকার করায় সে ধারালো দা দিয়ে আমার গলায় কোপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। পরিবারের লোকজন এগিয়ে এসে আমাকে প্রাণে রক্ষা করেছে। তাই নিরুপায় হয়ে আমি গ্রামবাসীকে নিয়ে চেয়ারম্যানের সহায়তায় ছেলেকে পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছি।’
ইউপি চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘মাদক পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেয়। ঘটনাটি জানতে পেরে মাদকাসক্ত কাজিরুলকে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার জন্য আমি তাঁর পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছি।’