গাজীপুরে সংঘর্ষে নিহত পোশাকশ্রমিক জালালের স্ত্রী চাকরি পেলেন

গাজীপুরের শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত জালাল উদ্দিনের স্ত্রীকে চাকরি দিয়েছেন মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড নামের তৈরি পোশাক কারখানা। বুধবার বিকেলে নিহত শ্রমিক জালালের স্ত্রী নার্গিস পারভীনের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের কোনাবাড়ির জরুন এলাকায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত জালাল উদ্দিনের স্ত্রীকে চাকরি দিয়েছে মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড নামের তৈরি পোশাকের একটি কারখানা। আজ বুধবার বিকেলে জালালের স্ত্রী নার্গিস পারভীনের হাতে নিয়োগপত্রটি তুলে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২১ নভেম্বর নিহত জালাল উদ্দিনের সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে প্রাথমিকভাবে খরচের জন্য নগদ দেড় লাখ টাকা দিয়ে সহায়তাও করে কারখানাটি।

আজ বিকেলে গাজীপুরের কাশিমপুরের নয়াপাড়ায় মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড কারখানায় আসেন নিহত শ্রমিক জালালের স্ত্রী নার্গিস পারভীন ও একমাত্র কন্যাসন্তান জান্নাতুল বাকিয়া মরিয়ম (৯)। সেখানে কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আবু সেহাব তাঁর হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন, যা আগামী ১ ডিসেম্বর কার্যকর হবে। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক খন্দকার আহমাদুল করিম মান্না, সহকারী ব্যবস্থাপক মো. এনামুল করিম ও আব্বাস আলী শেখ প্রমুখ।

চাকরি পাওয়ার পর নার্গিস পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মাল্টিফ্যাবস কারখানার মালিকের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার স্বামী অন্য কারখানায় চাকরি করতেন। কিন্তু আমাকে অন্য একটি কারখানার মালিক ডেকে নিয়ে আমার সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন। নগদ দেড় লাখ টাকাও দিয়েছিলেন। এবার তিনি আমাকে তাঁদের কারখানায় চাকরি দিয়েছেন। আমি এই চাকরিটাই চেয়েছিলাম। সেটি পাওয়াতে এখন আমি সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারব।’

নার্গিসকে কারখানাটিতে কল্যাণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু সেহাব বলেন, ‘নিহত শ্রমিক জালাল উদ্দিনের স্ত্রী নার্গিস পারভীন কারখানার শ্রমিকদের দেখাশোনা করবেন। প্রাথমিকভাবে তাঁর বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। সঙ্গে দুপুরের খাবার, চিকিৎসা সুবিধা, মোবাইল বিল ও যাতায়াত সুবিধা পাবেন।’

নার্গিসের স্বামী জালাল উদ্দিন (৪০) জরুন এলাকার ইসলাম গ্রুপের সুইং সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বাঁশহাটি গ্রামের চান মিয়ার ছেলে। জরুন এলাকার ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। ৮ নভেম্বর বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের সময় বাড়ি যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন জালাল। এরপর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মারা যান তিনি।

নার্গিস পারভীন বলেন, ‘আমি বিএ পাস করে গৃহিণী ছিলাম। আমার স্বামী আমাকে চাকরি করতে দেননি। স্বামীর মৃত্যুর পর সংসার কীভাবে চলবে, সেই চিন্তায় ছিলাম। আল্লাহ আমার সেই পথ খুলে দিয়েছেন। কারখানার মালিক আমাকে ডেকে নিয়ে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছেন। আমি দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে চাই।’