রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপস্থিত হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপস্থিত হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় যেসব সিদ্ধান্ত নিল হল প্রশাসন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে হল প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হল প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। হলের নিরাপত্তাপ্রহরীকে মারধরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সরাসরি ছাত্রত্ব বাতিল ও গ্রেপ্তারের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হল প্রশাসন। এ ছাড়া বহিরাগত ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ১৬ মে দুপুরের মধ্যে নেমে যাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে হলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে। ওই সূত্র প্রথম আলোকে বলেন, শনি ও সোমবার ছাত্রলীগের ঘটনার ব্যাপারে আজ দুপুর দুইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হল প্রশাসনের সভা হয়। সভায় প্রকৃত ঘটনা কী, কারণ, উদ্দেশ্য ও পেছনে কারা—জানতে তিন সদস্যের একটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার রাতে সংঘর্ষের জেরে পরদিন সকালে হলের নিরাপত্তাপ্রহরীকে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিল ও গ্রেপ্তারের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মারধরের ঘটনা হল প্রশাসনের সামনে ঘটায় তদন্ত কমিটি না করে সরাসরি প্রশাসনের কাছে ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ করা হবে। হলের বহিরাগত ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ১৬ মে দুপুরের মধ্যে নেমে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক অনুপম হীরা মণ্ডলকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন আবাসিক শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন ও তানজিল ভূঞা। তাঁদের দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, হলের অতিথিকক্ষে বসাকে কেন্দ্র করে গত শনিবার রাত ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তখন দফায় দফায় রামদা ও লাঠিসোঁটা হাতে একে অপরকে ধাওয়া করেন নেতা-কর্মীরা। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ফটক ও মাদার বখ্শ হলের মধ্যবর্তী স্থানে দুই পক্ষ অবস্থান নিয়ে ওই ঘটনা ঘটান।

পরদিন রোববার সকালে তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে সোহরাওয়ার্দী হলের নিরাপত্তাপ্রহরী মনিরুল ইসলামকে মারধর করেন সভাপতি-সম্পাদকের অনুসারীরা। মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত নেতা-কর্মীরা হলেন সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমান, মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সানি হাজারী, মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী আজিজুল হক ও বহিরাগত কয়েকজন।

সংঘর্ষের ঘটনার পর গতকাল সোমবার রাতে এক নেতাকে ‘হত্যার হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। তখন তাঁরা রামদা, রড, লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন। এরপর দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে হল প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা সোহরাওয়ার্দী হলে তল্লাশি চালান। অভিযান শেষে আজ ভোর সাড়ে চারটার দিকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন নেতা-কর্মীরা। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।