সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় নিজ গ্রামে সমাহিত করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে জোহরের নামাজের পর উপজেলার মজিদপুর দয়হাটা গ্রামে চতুর্থ জানাজা শেষে তাঁকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে আজ সকাল সোয়া ১০টার দিকে শ্রীনগর উপজেলা স্টেডিয়ামে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বদরুদ্দোজা চৌধুরী মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে বুধবার বদরুদ্দোজা চৌধুরী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
গতকাল শনিবার সকাল আটটার পর উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাদ জোহর বারিধারায় ৮ নম্বর সড়কে বায়তুল আতিক জামে মসজিদে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা হয়।
আজ সকালে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে তৃতীয় জানাজায় উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, তাঁর বাবা মানুষ হিসেবে, রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে, একজন চিকিৎসক হিসেবে কয়েকটি বিষয়ে শিক্ষা রেখে গেছেন। কেউ কখনো কাউকে সম্মান করে ছোট হয় না, কেউ হিংসা করেও বড় হতে পারে না। মাহী বি চৌধুরী বলেন, তাঁর বাবা ৫৮ বছর রাজনীতি করেছেন। তাঁকে কোনো দুর্নীতি, সন্ত্রাস স্পর্শ করতে পারেনি। সব দলের মানুষ তাঁর বাবাকে ভালোবাসেন।
বাবার দাফন সম্বন্ধে মাহী বি চৌধুরী বলেন, ‘আমার বাবা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা চাননি। কলেমা পড়ে বিক্রমপুরের মানুষ তাঁকে বিক্রমপুরের মাটিতে শোয়াবেন, এটাই চেয়েছিলেন। এটা নিয়ে কেউ কোনো বিতর্ক করবেন না। আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি চাই।’ এ সময় সবার উদ্দেশে তিনি তাঁর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নাজাতের জন্য দোয়া চান।
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের উপনেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে বদরুদ্দোজা চৌধুরী তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া—দুই সরকারের সময়ই মন্ত্রী ছিলেন। বিটিভিতে তাঁর ‘আপনার ডাক্তার’ অনুষ্ঠান খুবই জনপ্রিয় ছিল।
মুন্সিগঞ্জ-১ আসন থেকে বদরুদ্দোজা চৌধুরী পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দুবার জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং একবার বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি খালেদা জিয়ার সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
পরে ২০০৪ সালের ৮ মে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর ছেলে মাহী বি চৌধুরী দলের মুখপাত্র ও প্রেসিডিয়াম সদস্য।
১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে (প্রখ্যাত মুন্সেফ বাড়ি) নানাবাড়িতে জন্ম নেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তাঁর বাবা আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহসভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন কৃতী ছাত্র। ১৯৪৭ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। সব পরীক্ষায়ই তিনি মেধাতালিকায় ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী। তাঁরা দুই মেয়ে ও এক ছেলের মা–বাবা। তাঁদের বড় মেয়ে মুনা চৌধুরী পেশায় আইনজীবী। ছোট মেয়ে শায়লা চৌধুরী চিকিৎসক।