সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলছে। আজ শনিবার রাত সাড়ে আটটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল। সংঘর্ষে প্রাথমিকভাবে শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বেলা দুইটা থেকে নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি শুরু হয়। এতে হাজারো ছাত্র-জনতা অংশ নেন। বেলা পাঁচটার দিকে হঠাৎ পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় একটু পরপরই পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের বাধায় আন্দোলনকারীরা নয়াসড়ক, জিন্দাবাজার ও দরগা গেটমুখী সড়কের দিকে ভাগ হয়ে যান। তিন দিক থেকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়। সন্ধ্যা সাতটার পর থেকে নয়াসড়ক ও জিন্দাবাজারমুখী সড়ক থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে শিক্ষার্থীরা সরে গেলেও দরগা গেটমুখী এলাকায় এখনো ছাত্র-জনতা রয়েছেন। সেখানে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে। তবে পরিস্থিতি আগের চেয়ে এখন অনেকটাই শান্ত।
সংঘর্ষে পুলিশ ছয় সদস্য, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মী, পথচারীসহ সব মিলিয়ে শতাধিক আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন। হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ চড়াও হয়ে আক্রমণ শুরু করলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়। এ ছাড়া আন্দোলনে যোগ দিতে এবং ফেরার পথে অনেক শিক্ষার্থীর ওপর নগরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। এতে বেশ কয়েকজনের মাথা ফেটে গেছে।
রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে জানিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী শেখ প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা শুরু থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করায় পুলিশ বাধা দেয়নি। একপর্যায়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ আসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ তখন সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি নিক্ষেপ করে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের একজন ফয়সাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের অহিংস কর্মসূচিতে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দিনভর মহড়া দিয়েছেন। কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীকে তাঁরা আহত করেছেন। পুলিশের গুলি ও শেলে ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর বাইরে আরও অন্তত ৭০ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশি হামলায় নিন্দা, ক্ষোভ
সিলেটের চৌহাট্টা এলাকায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশ জাসদ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা সিলেট জেলা শাখার নেতারা। আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
বিবৃতি প্রদানকারী নেতারা হচ্ছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট সিলেট জেলার আহ্বায়ক সিরাজ আহমদ, বাংলাদেশ জাসদ সিলেট মহানগরের সভাপতি জাকির আহমদ, সিপিবি সিলেটের সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেন, বাসদ জেলার আহ্বায়ক আবু জাফর, বাসদ (মার্ক্সবাদী) জেলার সদস্য সঞ্জয় কান্ত দাশ, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার নেতা সুশান্ত সিনহা, সিপিবি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাছান, বাসদ সিলেটের সদস্যসচিব প্রণব জ্যোতি পাল ও সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতা মহীতোষ দেব।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিকেল পাঁচটায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাবেশ ও গণ-অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয় প্রবীণ বাম নেতা বেদানন্দ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে। এর পরপরই পুলিশ-বিজিবি ও ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালায়। অতি দ্রুত সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
এদিকে সিলেট শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি। সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বিবৃতিতে বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও সরকার সহ্য করতে পারছে না। ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত এই সরকারের একমুহূর্ত ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই। দ্রুত এই সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।