খুলনার কয়রায় চর বনায়নের গাছ উপড়ে ফেলে খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) ব্যবহার করে বেড়িবাঁধ সংস্কার করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মানুষের প্রতিবাদের মুখে আজ সোমবার সকালে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের শাকবাড়িয়া নদী পাড়ে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হরেন্দ্র নাথ সরকারের নেতৃত্বে এই কাজ চলছিল বলে জানিয়েছেন এলাকার লোকজন।
এলাকাবাসী বলছেন, বেড়িবাঁধ মেরামতের নামে বাঁধ রক্ষাকারী চরের গাছ উপড়ে ফেলে খননযন্ত্র দিয়ে ঢালের মাটি কেটে বেড়িবাঁধ মেরামত করা হলে পুনরায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে বাঁধটি। বছর না যেতে বাঁধটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই খননযন্ত্র বাদ দিয়ে শ্রমিকের মাধ্যমে কোদাল দিয়ে মাটি কেটে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ করতে হবে।
খননযন্ত্র ব্যবহার করে চর বনায়নের গাছ উপড়ে ফেলার প্রতিবাদে এলাকাবাসী আজ ভোর থেকে শাকবাড়িয়া নদীর বেড়িবাঁধে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ১০টার দিকে দুই শতাধিক নারী-পুরুষের প্রতিবাদের মুখে নদীর চরের গাছ উপড়ে মাটি কাটার কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
উপস্থিত লোকজন বলেন, কয়রা গ্রামের শাকবাড়িয়া নদীর এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দরপত্র ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির মাধ্যমে বিপ্লব এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজটির তত্ত্বাবধানে আছেন ইউপি সদস্য হরেন্দ্র নাথ সরকার। তিনি দায়িত্ব নিয়ে গতকাল রোববার থেকে খননযন্ত্র দিয়ে চর বনায়নের গাছ উপড়ে মাটি কেটে বেড়িবাঁধ সংস্কারকাজ শুরু করেছেন। গতকালও লোকজন এর প্রতিবাদ করেন। তাতে কর্ণপাত না করায় আজ এলাকার দুই শতাধিক লোকজন একত্র হয়ে কাজ বন্ধ করে দেন।
কয়রা গ্রামের চঞ্চলা রাণী বলেন, বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হোক, সেটি তাঁরাও চান। তবে নদীর চরের গাছ কেটে ও ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নয়। কারণ, নদীর চরের গাছ কাটলে দ্রুতই নদী ভাঙনের কবলে পড়বে।
একই এলাকার আবুল হোসেন মল্লিক বলেন, এভাবে কাজ চালালে নদীর পানির আঘাতে যেকোনো সময় রাস্তা ভেঙে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য হরেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবির মুখে আপাতত কাজ বন্ধ আছে। কাজটি মূলত কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতা পেয়েছেন। তিনি তাঁর অনুরোধে কাজটি দেখাশোনা করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা অরবিন্দ কুমার মণ্ডল জানান, গাছ না কেটে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে তাঁরা এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষর নিয়ে একটি লিখিত আবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মমিনুর রহমান বলেন, চর বনায়নের গাছ উজাড় করে বাঁধ সংস্কারের সুযোগ নেই। গাছ কেটে থাকলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরা পাউবোর (বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, বাঁধ মেরামতের জন্য নদীর চরের গাছ কাটার সংবাদ পেয়েছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে উপসহকারী প্রকৌশলীকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।