রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের পেছনে দলীয় টেন্টে এই ঘোষণা দেন নতুন কমিটিতে সহসভাপতির পদ পাওয়া শাহিনুল ইসলাম ওরফে ডন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিবের কক্ষে ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে অনুসারী নেতা–কর্মীদের নিয়ে মাদার বখশ হলে যান বিদায়ী কমিটির কাজী আমিনুল ইসলাম, নতুন কমিটির সহসভাপতি শাহিনুল ইসলাম সরকার ও তাওহিদুল ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সাকিবুল হাসান। তাঁরা ওই হলের ২১৫ নম্বর কক্ষ ও ওই কক্ষের দুই পাশের ২টি কক্ষে ভাঙচুর চালান। এ সময় তাঁরা কক্ষের দরজা, জানালা ও গাছের টব ভেঙে প্রায় ১০ মিনিট পর হল ত্যাগ করেন। ২১৫ নম্বর কক্ষে থাকেন বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিব।
দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর গতকাল শনিবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৩৯ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। আগামী এক বছরের জন্য এই কমিটিতে মোস্তাফিজুর রহমানকে সভাপতি ও আসাদুল্লা হিল গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। মোস্তাফিজুর আগের কমিটির গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। আসাদুল্লা হিল গালিব ছিলেন বিদায়ী কমিটির প্রশিক্ষণ সম্পাদক।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, নতুন কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে আজ বেলা সাড়ে ১১টার পর শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতারা অনুসারীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। এরপর দলীয় টেন্টে সহসভাপতি পদ পাওয়া শাহিনুল ইসলাম নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। ক্যাম্পাসে নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও সেখান থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
সেখানে শাহিনুল ইসলাম বলেছেন, কমিটির সাধারণ সম্পাদক এইচএসসি পাস। তিনি অনার্স করতে পারেননি। ভুয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে কীভাবে ছাত্রলীগ চলবে? আর সভাপতি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ব্যবসা করতেন। ছয় মাসের মধ্যে নেতা হয়ে এসেছেন। তাঁরা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। তাঁদের দুজনকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ সাত বছর পর সম্মেলন হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি ৩৪ দিন যাচাই–বাছাই করে কী এমন কমিটি দিল? এটা বিতর্কিত কমিটি। এখানে সাধারণ সম্পাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন। তিনি বিবাহিত। কমিটিতে থাকা প্রায় সবাই বিতর্কিত। ছাত্র নির্যাতন, সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি—সবই করেছেন তাঁরা।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তবে নতুন কমিটি ঘোষণা ছাড়াই শেষ হয়েছিল সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রথম বর্ষে উত্তীর্ণ হলেও দ্বিতীয় বর্ষ আর টপকাতে পারেননি। পরে ড্রপআউট হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন তিনি। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভুয়া সনদে’ তিনি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকোর্সে ভর্তি হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। ছাত্রত্ব না থাকলেও তিনি অবৈধভাবে হলে বসবাস করেন।
নতুন কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ছাত্রত্ব ধরে রাখতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার লাংগুয়েজের একটি শর্ট কোর্সে ভর্তি রয়েছেন।
অবশ্য নতুন কমিটি বাতিলের দাবি জানানো নেতারাও ক্যাম্পাসের নিয়মিত ছাত্র নন। কাজী আমিনুল ইসলাম মার্কেটিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৬ সালে বিবিএ ও পরের বছর এমবিএ শেষ করেছেন তিনি। ছাত্রত্ব ধরে রাখতে একই বিভাগের সন্ধ্যাকালীন এমবিএ কোর্সে ভর্তি রয়েছেন। শাহিনুল ইসলাম সরকার ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনিও ২০১৬ সালে অনার্স এবং ২০১৮ সালে মাস্টার্স শেষ করে ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজের জার্মান ভাষার শর্ট কোর্সে ভর্তি রয়েছেন।
অবাঞ্ছিত ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক যাচাই-বাছাই করেই কমিটি ঘোষণা করেছেন। ছাত্রলীগেরই কতিপয় নেতা নাকি কমিটিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছেন বলে শুনেছেন। আসলে তাঁরা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্য এমনটা করছেন। এসব থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে সামনে নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া আসাদুল্লাহ হিল গালিবের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।