শিকলবন্দী কিশোর
শিকলবন্দী কিশোর

চুরির অভ্যাস ঠেকাতে ৩ বছর ধরে শিকলবন্দী কিশোর

ঝিনাইদহে রাস্তার ধারে অসহায় ভাব নিয়ে বসে থাকে কিশোর রাজন (ছদ্মনাম)। হৃদয়বান কেউ এগিয়ে এলে কান্না শুরু করে দেয়। সহযোগিতার আহ্বান জানায়। দরদ দেখিয়ে কেউ কেউ ছেলেটিকে বাড়িতে নিয়ে খাবার খেতে দেয়। পরে সুযোগ বুঝে সেই বাড়ি থেকে চুরি করে পালায় ছেলেটি। পরিবারের সদস্যরা অনেক মারধর করেও এমন চুরির স্বভাব ছাড়াতে পারেনি। তাই বাধ্য হয়ে তিন বছর ধরে ওই কিশোরকে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে।

১৫ বছর বয়সী ওই কিশোরের বাড়ি ঝিনাইদহে। তার বাবা দিনমজুর, মা গৃহিণী। অভাব-অনটনের সংসার ছেলেটির বসবাস।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাত বছর আগে ঝিনাইদহ শহরের কিছু বখাটে ছেলের পাল্লায় পড়ে চুরি শুরু করে রাজন। এর পর থেকে সুযোগ পেলেই সে চুরি করে। বাড়ি থেকে পালিয়ে ঝিনাইদহ শহর ও আশপাশের জেলায় চুরি করে বাড়ি ফেরে সে। ধরা পড়ার পর বিভিন্ন সময় পুলিশ রাজনকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে গেলেও তার চুরির অভ্যাস বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরির অভিযোগ পেয়ে অতিষ্ঠ হয়ে তিন বছর আগে শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়। এখনো সে শিকলবন্দী।

রাজনের বাবা বলেন, তাঁর ছেলে সুযোগ পেলেই চুরি করে। চুরি যেন তার নেশা। উপায় না পেয়ে তিন বছর ধরে ছেলেকে শিকলবন্দী করে রেখেছেন। চুরির অভ্যাস বন্ধ করতে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসক দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

রাজনের মা বলেন, তাঁর দুই সন্তান। ছোট এক মেয়ে আছে। ছেলেকে এভাবে বেঁধে রাখতে খুব খারাপ লাগে। তিনি আরও বলেন, ‘ওর কাছে আমাদের শুধুই চাওয়া একটু পড়াশোনা করুক, আর অন্য ছেলেদের মতো খেলা করুক, ঘুরে বেড়াক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল মতিন বলেন, কাউকে দেখে ছেলেটির চুরির অভ্যাস হতে পারে। আবার মানসিক বিকাশের জটিলতার কারণেও এটা হতে পারে। তবে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি মোটিভেশন দিলে হয়তো ছেলেটির এমন চুরির সমস্যা সমাধান হতে পারে।