দল থেকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর থেকে জাহাঙ্গীর আলমের বাসভবনে আগের মতোই নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের ভিড় লেগে থাকছে।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে দল থেকে বহিষ্কৃত এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ হারানোর পর অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা থেকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর থেকে চাঙা হয়ে উঠছেন তিনি। আগের মতোই তাঁর বাড়িতে এখন নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের ভিড় লেগে থাকছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কথোপকথনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। এর জেরে গত বছরের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হন জাহাঙ্গীর আলম। সাময়িক বরখাস্ত করা হয় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে। সেই থেকে অনেকটা একা হয়ে পড়েন তিনি, চলে যান আলোচনার বাইরে।
এর মধ্যে ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীসহ দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত দলের শতাধিক নেতা-কর্মীকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। এরপরই গাজীপুরে জাহাঙ্গীরের বাসায় তাঁর অনুসারীদের ভিড় জমতে থাকে।
সাধারণ ক্ষমার আওতায় জাহাঙ্গীর আলম পড়েন কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশাও তৈরি হয়েছিল। তবে গত মঙ্গলবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিষয়টি পরিষ্কার করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীর তো অ্যাপ্লাই (আবেদন) করেছে। তারটা মওকুফ করা হয়েছে। যারাই আবেদন করেছে, তাদেরকেই ক্ষমা করা হয়েছে। এক শর মতো ছিল। অনেকে কলহে-বিবাদে জড়িয়েছে, শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছে। এগুলো ক্ষমা করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে গতকাল বুধবার জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তা আজ প্রমাণিত হয়েছে যে সেটি ষড়যন্ত্র ছিল। আমাকে আবার দলে ফিরিয়ে নেওয়ায় আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চির কৃতজ্ঞ। গাজীপুরের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই আমার পরবর্তী কাজ চালিয়ে যাব। নগরবাসী এ সময় আমার পাশে থাকায় তাঁদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ।’
জাহাঙ্গীর আলম প্রসঙ্গে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (আজ) দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেখানে যে সিদ্ধান্ত হবে, সে অনুযায়ী আমরা পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাব।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগে জাহাঙ্গীর আলমের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আছে। যাঁরা তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী, তাঁরা জাহাঙ্গীর আলম দলে ফিরে আসাতে খুশি। আর যাঁরা তাঁর বিরোধী, তাঁরা একটু হতাশায় পড়েছেন। কারণ, তাঁরা জাহাঙ্গীরের বিপদের সময়ে তাঁকে নানাভাবে হেয় করার চেষ্টা করেছেন।
গতকাল বিকেলে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। তাঁকে তো মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়নি, সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িকভাবে বরখাস্ত যেসব কারণে করা হয়েছে, সেগুলো প্রক্রিয়াধীন।