রাজশাহীতে স্বেচ্ছাসেবী তরুণদের স্বল্পমূল্যের ডিম বিক্রির দোকানে ভিড়

রাজশাহীতে খামারিদের কাছ থেকে সরাসরি ডিম এনে বিক্রি করছেন স্বেচ্ছাসেবী কয়েকজন তরুণ। সোমবার বিকেলে নগরের সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে বড় মসজিদের পাশে একটি জায়গায় মানুষের জটলা। রীতিমতো হইচই পড়ে যাওয়া জায়গাটিতে গিয়ে দেখা গেল, ‘ভলান্টিয়ার্স অব রাজশাহী’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বল্পমূল্যে ডিম বিক্রি করছে। আর তাতেই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে ডিম কিনছেন।

তরুণদের এই সংগঠন আজ সোমবার রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট ছাড়াও নগর ভবন ও মনিচত্বর এলাকায় একই দামে ডিম বিক্রি করেছে। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিনটি জায়গায় তারা ১০ হাজারের বেশি ডিম বিক্রি করেছে। সংগঠনটি খামারিদের কাছ থেকে সরাসরি ডিম এনে বিক্রি করছে। লাল রঙের ফার্মের ডিম ৪৮ টাকা হালি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। আর এক ডজন ১৪২ টাকায় এবং এক খাঁচা (৩০টি ডিম) ৩৫২ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে ডিমের দাম অনেক বেশি। এ জায়গায় এসে তাঁরা দেখেন, ডিমের হালিতে ছয় থেকে আট টাকা পর্যন্ত কম। অথচ আজ বাজারে খুচরায় ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা পর্যন্ত লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে।

আবদুল মালেক নামের এক ক্রেতা বলেন, সাহেব বাজার এলাকায় একটি কাজে এসেছিলেন। হঠাৎ ভিড় দেখে তিনি গিয়ে দেখেন, ডিম বিক্রি হচ্ছে। তিনি এখান থেকে চার হালি ডিম কিনেছেন। বাজারদরের চেয়ে এখানে কম দামে ডিম কিনে তিনি খুশি বলে জানান।

হালিতে ছয় থেকে আট টাকা পর্যন্ত কম পেয়ে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে ডিম কিনছেন। সোমবার বিকেলে নগরের সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায়

এখান থেকে দুই হালি ডিম কিনলেন রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মো. নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, তরুণদের এটা একটা ভালো উদ্যোগ। বাজারে ৫৬ টাকা, এখানে ৪৮ টাকায় ডিম পাওয়া যাচ্ছে। তরুণেরা স্বেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছেন। নিজেরা কোনো শ্রমের মূল্য নিচ্ছেন না। আর তাঁদের আলাদা করে দোকান ভাড়া নিয়েও ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে না। এ কারণে কম মূল্যে ডিম বিক্রি করতে পারছেন। নাজমুল হোসেন আরও বলেন, সিন্ডিকেটগুলো খামারগুলোতে দাদন দিয়ে রেখেছে। ডিম তাদের কাছেই বিক্রি করতে হয়। সরকার যদি সরাসরি ডিম খামার থেকে কিনে নিয়ে বিক্রি করে, তাহলে সিন্ডিকেট ভেঙে যেতে পারে।

ভলান্টিয়ার্স অব রাজশাহী সংগঠনের সভাপতি যুবায়ের মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মধ্যে ডিমটা নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। নানা রকম সিন্ডিকেটের কথাও শোনা যাচ্ছে। সেই জায়গা থেকে তাঁরা উদ্যোগ নিয়ে সরাসরি খামার থেকে ডিম এনে বিক্রি করছেন। তাঁদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডিমের ডিলার। তাঁর মাধ্যমে তাঁরা ডিম নিয়ে এসেছেন। এতে তাঁদের শুধু ভ্যানভাড়া ও ঠোঙার খরচ হয়েছে।

যুবায়ের আরও বলেন, যেসব নিত্যপণ্যের দাম মানুষের সাধ্যের বাইরে যাবে, সেগুলো তাঁরা বিক্রির তালিকায় রাখবেন। তাঁরা আগামীকাল মঙ্গলবার হড়গ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও সিঅ্যান্ডবি মোড়ে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিম বিক্রি করবেন।

এ উদ্যোগের ফলে বাজারে প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলার সহকারী পরিচালক মাসুম আলী। তিনি বলেন, যখন বাজারে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তখন সেই পণ্য খামার বা মাঠপর্যায় থেকে এনে যদি কেউ সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রি করে, তাতে অবশ্যই বাজারে প্রভাব পড়বে।