‘বাহে, প্রার্থী আর কর্মীর জ্বালায় ঘুমবার পারুছি না। প্রার্থী গেইলে, কর্মী আইসে। সকাল থাকি গভীর রাত পর্যন্ত বাড়িত আসি ভোট চাওছে। মাথাত হাত ছোঁয়ায় দোয়া নেওছে, কথা দেওছে ওমাক ভোট দিলে হামার দুঃখ–দুর্দশা থাকির নেয়।’ গতকাল রোববার এসব কথা বলেন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের ভোটার নজরুল ইসলাম।
একই গ্রামের গৃহবধূ জোহরা বেগম বলেন, ‘ভোটের আর দুই দিন বাকি, প্রার্থী-কর্মীরা ঘুম পাড়া বাদ দিছে। বউ ছাওয়া সবাই আসি ভোট চাওছে। ঘরোত ঢুকে হাঁড়ির ভাত দেখোছে। বাপ-মাও দোহাই দেওছে। কিন্তু এই ভোট কোনা বেরাইলে কারও দেখা পাও যায় না। কাছোত গেইলেও চিনে না। ওই জন্যে এবার কারও কথাত নোয়ায়, ভাবিচিন্তি সৎ–যোগ্য মানুষোক ভোট দিমো।’
উপজেলার মুকুলের বাজারে আলাপকালে তারাজুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘ভোটটা বেরাইলে যন্ত্রণা থাকি বাঁচি। এলাকাত সউগ সময় লোকজনে ভর্তি। মাঝরাইতোত ঘুম থাকি ডাকে তুলি ভোট চাওছে। খাবার বসিও প্রার্থীর লোকজন আসি ডাকাডাকি করোছে। ভোট না বেড়াইলে হামার শান্তি নাই।’
চতুর্থ ধাপে ৫ জুন তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোগ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কয়েকজন প্রার্থীর সমর্থকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রার্থীদের এখন দিনরাত নির্বাচনী প্রচারের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। ভোরের আগে বিছানায় গেলেও সকালেই তাঁরা আবার বের হয়ে পড়ছেন। ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ৫৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। মোট ভোটার ১ লাখ ১৯ হাজার ২২২ জন। এ নির্বাচনে দুজন চেয়ারম্যান প্রার্থী, নয়জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গতকাল রোববার সকাল থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত উপজেলার পাঁচটি হাট ও ছয়টি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হাট-বাজারের চায়ের দোকান, সড়কের মোড়, মাঠ, গ্রামের মোড়ে মোড়ে দল বেঁধে ভোটের হিসাব কষছেন সাধারণ ভোটাররা। প্রার্থীরা তাঁদের কাছে গিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি ও উন্নয়নের কথা বলে ভোট চাইছেন।
হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের নেকিরহাট মোড়ে বসে গল্প করছিলেন সাতজন নারী। তাঁদের মধ্যে গৃহবধূ নবিজোন বেগম বলেন, ‘প্রার্থীরা হ্যান্ডশেক করি ভোট চাওছে। বিপদ-আপোদে পাশোত থাকবে। হামার দুঃখ–দুর্দশা ঘুচাইবে। এলাকাত অভাব থাকির নেয় প্রতিশ্রুতিও দেওচে। যায় আইসোছে সবাই একই কথা কওচে। ভোট গেইলে তো আর হামাক চিনবার নেয়। প্রার্থী বুঝি ভোট দিমো।’
গতকাল বিকেলে চিলাপাক এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালাতে দেখা যায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটনকে। তিনি তাঁর দোয়াত কলম প্রতীকে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। কথা হলে আনিছুর রহমান বলেন, ১০ বছর ধরে চেয়ারম্যান পদে আছেন। দীর্ঘ এই সময়ে মানুষের বিপদে-আপদে ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি সাধ্যমতো নিজের অর্থ দিয়ে এলাকার প্রতিটি মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করেছেন। ১০ বছর দায়িত্ব পালনে কোনো গাফিলতি করেননি, করেননি কোনো অনিয়মও। তারাগঞ্জের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে পাশে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন।
মোটরসাইকেল প্রতীকের আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহিনুর ইসলাম মার্শাল কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘তারাগঞ্জের প্রাণ ঐতিহ্যবাহী তারাগঞ্জ হাট গড়ার কারিগর আমার বাবা-দাদারা। ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্য থাকা অবস্থায় মানুষের বিপদে–আপদে পাশে ছিলাম। সাধারণ মানুষের চাহিদায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোটরসাইকেল প্রতীকে দাঁড়িয়েছি। যেখানে যাচ্ছি, সাধারণ মানুষ ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। ইনশা আল্লাহ জয় নিশ্চিত।’