ওবায়দুল কাদেরের জেলায় আ.লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন শুরু, সাজ সাজ রব

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি–বার্ষিক সম্মেলনে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে যোগ দেন নেতা–কর্মীরা। নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হয়েছে। মাইজদীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে সম্মেলন ঘিরে সাজ সাজ রব। সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থলে আসতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। নিজের জেলার এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সম্মেলনকে ঘিরে নতুন সাজে সেজেছে জেলা শহর মাইজদী। মাইজদী-চৌমুহনী চার লেন সড়কের দুই পাশে শোভা পাচ্ছে নানা রঙের ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। তৈরি করা হয়েছে অর্ধশতাধিক তোরণ। সম্মেলনস্থল শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে তৈরি করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। যেখানে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার লোকের। এ ছাড়া স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে সম্মেলনে আগত নেতা-কর্মীদের বসার সুব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা।

দলীয় সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর। ওই সম্মেলন হয়েছিল শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে। ওই সম্মেলনে প্রস্তাব ও সমর্থনের ভিত্তিতে এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমকে সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছিলেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের।

সূত্র জানায়, পরবর্তী সময় কেন্দ্রে জমা দেওয়া প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবিত কমিটি বাতিল করে ৮৭ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। যাতে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বাদ পড়েন একরামুল করিম চৌধুরী। তাঁর ঠাঁই হয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে।

শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্টেডিয়ামের আশপাশের উঁচু ভবনগুলোতে শোভা পাচ্ছে সম্মেলনে সভাপতি-সম্পাদক পদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনুসারীদের টাঙানো বিশাল বিশাল ব্যানার। সড়কের দুই পাশ ছেয়ে গেছে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে। আলোকসজ্জার বর্ণিল সাজে সেজেছে স্টেডিয়ামের আশপাশের এলাকাও।

স্টেডিয়ামের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুটি বিশাল আকৃতির প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নৌকার আকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। দুই প্যান্ডেলের মাঝখানের যাতায়াতের পথে তৈরি করা হয়েছে বর্ণিল রঙে সাজানো বেশ কয়েকটি ছোট ছোট গেট। অতিথিদের যাতায়াতের পথে বসানো হয়েছে লালগালিচা এবং রঙিন কার্পেট।

সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা হয় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সহিদ উল্যাহ খান সোহেলের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নোয়াখালীর ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু, সুন্দর এবং জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন আয়োজনের সব প্রস্তুতি তাঁরা সম্পন্ন করেছেন। এই সম্মেলনে প্রায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম করার প্রস্তুতি তাঁরা নিয়েছেন। সম্মেলনে আগত দলীয় নেতা-কর্মীদের আপ্যায়ন ও খাবারদাবারেরও করা হয়েছে সুব্যবস্থা।

সম্মেলনে আলোচনায় যাঁদের নাম

এবারের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তিন প্রার্থী অনানুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের নাম ঘোষণা করেছেন। তাঁরা হলেন—সভাপতি পদে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। সাধারণ সম্পাদক পদে আহ্বায়ক কমিটির দুই যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন ও সহিদ উল্যাহ খান সোহেল। সহিদ উল্যাহ খান নোয়াখালী পৌরসভার টানা দুই মেয়াদের মেয়র। অপর দিকে শিহাব উদ্দিন সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর নাম সভাপতি প্রার্থী হিসেবে আলোচনা থাকলেও তাদের কেউই সম্মেলনে প্রার্থী হওয়ার কথা এখনো ঘোষণা করেননি। তবে দুই দিন ধরে একরামুলের পক্ষে তাঁর অনুসারীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু ব্যানার টাঙিয়েছেন। দুই নেতাই প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, তাঁরা দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দিকে চেয়ে আছেন। তাঁরা যদি কোনো দায়িত্ব দেন, তাহলে নিতে রাজি আছেন।

গানে গানে প্রার্থীদের নামে প্রচার

জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের তিন দিন আগে থেকে অনেকটা হঠাৎ করেই সভাপতি পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পদে সহিদ উল্যাহ খান ও শিহাব উদ্দিন শাহিনের পক্ষে পিকআপ ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে গানে গানে তাঁদের গুণগান প্রচার করতে দেখা যায়। এতে দলের নেতা-কর্মী এবং সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা লক্ষ করা গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্বের ধারাবাহিকতায় তিনি আগামী ৫ ডিসেম্বরের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী। এর আগে ২০১৯ সালের সম্মেলনেও তিনি সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী ছিলেন। এখন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে সিদ্ধান্ত দেন, সেটি তিনি মেনে নেবেন।

অপর দিকে সাধারণ সম্পাদক পদের আরেক প্রার্থী বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ১৪ বছরে জেলায় আওয়ামী লীগে যা কেউ করতে পারেননি, আমরা আহ্বায়ক কমিটি সেটা করে দেখিয়েছেন।’ সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে চান জানিয়ে বলেন, দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটি তিনি মেনে নেবেন।