কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পূর্ববিরোধের জেরে দুই বংশের মধ্যে সংঘর্ষে কাইয়ুম মিয়া (৪০) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের কর্তা বাড়ি ও সরকার বাড়ির মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৪৫ জন আহত হয়েছেন।
নিহত কাইয়ুম মিয়া সরকার বাড়ির রমিজ মিয়ার ছেলে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আটজনকে ঢাকায় এবং অন্যদের ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, মৌটুপি গ্রামে সরকার বাড়ি ও কর্তা বাড়ি প্রভাবশালী দুটি বংশ। দুই বংশের বিরোধ স্বাধীনতার আগে থেকে। বর্তমানে কর্তা বাড়ির নেতৃত্বে আছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাদেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন। সরকার বাড়ির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শেফায়েত উল্লাহ সরকার। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাঁরা আগেও বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ঈদুল আজহার আগের দিন ফুটবল খেলা নিয়ে দুই বংশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত কর্তা বাড়ির নাদিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৯ জুলাই মারা যান। এ ঘটনায় সরকারি বাড়ির লোকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। বিরোধ মেটাতে সালিসের দিন নির্ধারণ করা হলেও কর্তা বাড়ির লোকজন ঘোষণা দেন, সরকার বাড়ির একজনকে হত্যার আগে কোনো মীমাংসা নয়। এ অবস্থায় নাদিম হত্যার বদলা নিতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর কর্তা বাড়ির লোকজন সরকার বাড়িতে হামলা করে। ওই দিন বল্লম বিদ্ধ হয়ে সরকার বাড়ির ইকবাল মিয়া মারা যান।
ওই ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৯৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। মামলাটি করেন ইকবালের স্ত্রী নবিছা আক্তার। এরপর উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। আজ দুপুরে হত্যার বদলা নিতে পাল্টাপাল্টি ঘোষণা দিয়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে বল্লম বিদ্ধ হয়ে কাইয়ুম মিয়া মারা যান।
সরকার বাড়ির সাফায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্তা বাড়ির ৫২ বছরের অত্যাচারে আমরা শেষ। নাদিম হত্যার বদলা নিতে তাঁরা আমাদের বংশের দুজনের প্রাণ নিল। অন্তত ২০০ বাড়িঘর ভেঙেছে।’
অন্যদিকে কর্তা বাড়ির নেতা তোফাজ্জল হক বলেন, ‘ইকবাল হত্যার পর আমরা বাড়িছাড়া। আজ কিছু মানুষ বাড়িতে যাওয়ায় সরকার বাড়ির লোকজন ক্ষুব্ধ হয়। আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। আমাদের লোকজন কেবল প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছে।’
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ জানান, মৌটুপি গ্রামের ব্যাপারে পুলিশকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। কিছুদিন পরপর বংশ দুটির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। হত্যার পাল্টাপাল্টি প্রতিশোধ নেওয়ার মনোভাব থেকে এমন হচ্ছে। পুলিশ, র্যাব ও সেনাসদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেনি। ময়নাতদন্তের জন্য কাইয়ুম মিয়ার লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।