আমড়াজুড়ি বাজারের পাশে কাউখালী-শেখেরহাট সড়কের এক কিলোমিটার ভেঙে গেছে।
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার আমড়াজুড়ি ইউনিয়নে সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাজার, ফেরিঘাট ও সড়ক। গত এক বছরে আমড়াজুড়ি ফেরিঘাট বাজারের অর্ধশত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙনের শিকার হয়েছে। ২০ দিন আগে ৪টি দোকান নদীভাঙনের কারণে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হয়েছে। ইতিমধ্যে বাজার–সংলগ্ন কাউখালী-শেখেরহাট সড়কের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
বিলীন হওয়া ওই সড়কের বিকল্প হিসেবে তিন মাস আগে আমড়াজুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উদ্যোগে আধা কিলোমিটারের মতো একটি সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়। সড়কটির কাজ শেষ না করে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
গত সোমবার সকালে পূর্ব আমড়াজুড়ি ও মাগুড়া গ্রামের মানুষ নদীভাঙন রোধ এবং কাউখালী-শেখেরহাট সড়কের পাশে নতুন সড়কের কাজ ফেলে রাখার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। আমড়াজুড়ি ফেরিঘাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কায়েস হাওলাদার বলেন, প্রতিবছর দুই থেকে তিনবার সন্ধ্যা নদী ভাঙছে। ভাঙনের কবলে পড়া দোকানপাট প্রায়ই সরিয়ে নিতে হয়। গত এক বছরে অর্ধশত দোকান নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বাজারের ৭০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কাউখালী-শেখেরহাট সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে সড়কের কাজ শুরু হয়েছিল। ঠিকাদার কাজ ফেলে রেখেছেন। এতে পূর্ব আমড়াজুড়ি ও মাগুড়া গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, আমড়াজুড়ি বাজারের পশ্চিম দিকে ৫০০ মিটার এলাকা সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। নদী ভাঙনের কারণে কয়েকটি দোকান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নদীভাঙনে আমড়াজুড়ি বাজার মসজিদটিতে ফাটল ধরেছে। বাজারের পাশে কাউখালী-শেখেরহাট সড়কের এক কিলোমিটার ভেঙে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, আমড়াজুড়ি ফেরিঘাট থেকে প্রতিদিন একটি ফেরি পিরোজপুর সদর থেকে কাউখালী হয়ে নেছারাবাদ উপজেলায় চলাচল করে। এই ফেরিঘাট এলাকায় পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সন্ধ্যা নদী ভাঙছে। প্রতিবছর ভাঙনের কবলে পড়ছে আমড়াজুড়ি ফেরিঘাট বাজার। ২০ দিন আগে বাজারের ৪টি দোকান নদীভাঙনের কবলে পড়ায় সরিয়ে নিতে হয়েছে। কাউখালী-শেখেরহাট সড়কের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় উপজেলার পূর্ব আমড়াজুড়ি, মাগুড়া গ্রাম এবং এর সীমানাঘেঁষা ঝালকাঠি জেলার শেখেরহাট গ্রামের মানুষ যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
আমড়াজুড়ি বাজারের একটি খাবারের হোটেলের মালিক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমড়াজুড়ি ফেরিঘাট এলাকা সন্ধ্যা ও গাবখান খালের মোহনা হওয়ায় প্রতিবছর নদীভাঙনের ঘটনা ঘটছে। কয়েক বছর ধরে ভাঙন বেশি হচ্ছে। এক বছরে নদীভাঙনের কারণে আমার দোকান পাঁচবার সরিয়ে নিতে হয়েছে।’
আমড়াজুড়ি ফেরিঘাট বাজারের রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী কাওসার জামিল বলেন, নদীভাঙনের কারণে আমড়াজুড়ি ফেরিঘাট কয়েক মাস পরপর সরিয়ে নিতে হয়। দোকানপাট সরিয়ে নিতে হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে নদীভাঙন রোধ করা না গেলে বাজার, সড়ক ও ফেরিঘাট নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে।
আমড়াজুড়ি ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বাজার–সংলগ্ন নদীতে পাইলিং করে বালুর বস্তা ফেললেও নদীভাঙন রোধ করা যায়নি। সন্ধ্যা নদীর মোহনায় টেকসই নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও নদী শাসনের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে নদীভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে না। নতুন সড়কের কাজ ফেলে রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের সড়কটি নির্মাণের জন্য কোনো বাজেট নেই। তারপরও আমি দ্রুত কাজটি শেষ করার চেষ্টা করব।’
জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পিরোজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবে মওলা মো. মেহেদী হাসান বলেন, পাউবোর বরিশাল দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মজিবুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সন্ধ্যা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। নদীভাঙন রোধে প্রকল্প নেওয়ার জন্য শিগগিরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।