কে বলবে এটা বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের স্মরণে বানানো স্মৃতিস্তম্ভ

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনী চৌরাস্তায় ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে ঢাকা পড়েছে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্মৃতিস্তম্ভটি
ছবি: প্রথম আলো

অযত্ন, অবহেলা আর ব্যানার-ফেস্টুনে ঢাকা পড়ে আছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনী চৌরাস্তায় নির্মিত বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্কয়ার ও স্মৃতিস্তম্ভ। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই, সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ বলে কোনো কিছু আছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষও স্মৃতিস্তম্ভটির রক্ষণাবেক্ষণে নির্বিকার। এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

নোয়াখালী সড়ক বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০১ সালে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তায় চট্টগ্রাম বিভাগের একমাত্র বীরশ্রেষ্ঠ সোনাইমুড়ী উপজেলার রুহুল আমিনের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। পরবর্তী সময়ে স্মৃতিস্তম্ভটি নতুন রূপ দিতে দৃষ্টিনন্দন নকশার মাধ্যমে চৌরাস্তায় বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্কয়ার স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হয় ২০০৮ সালে। ওই বছরের ১০ নভেম্বর এই স্কয়ারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

নকশা অনুযায়ী বীরশ্রেষ্ঠের ম্যুরাল স্থাপন, মুক্তিযোদ্ধার হাতে রাইফেল প্রতিস্থাপন, ফোয়ারা নির্মাণ, বক স্থাপনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে এর নির্মাণকাজের ব্যয় হয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০১২ সালের ২০ এপ্রিল বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্কয়ারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চৌমুহনী পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

জমকালো উদ্বোধনের পর কিছুদিন ফোয়ারাটি চালু থাকলেও পরে পর্যায়ক্রমে শোভাবর্ধন উপকরণগুলো খুলে পৌরসভায় নিয়ে রাখা হয়। ধুলাময়লার সঙ্গে যোগ হয় রাজনীতিকদের পোস্টার ও ফেস্টুন। সর্বশেষ স্মৃতিস্তম্ভসহ পুরো স্কয়ার ঢাকা পড়েছে চৌমুহনী ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনের প্রার্থীদের ব্যানার ও ফেস্টুনে।

সম্প্রতি সেখানে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সারা বছর পোস্টার আর ফেস্টুনে ঢাকা থাকে বীরশ্রেষ্ঠের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত স্কয়ারটি। গত পাঁচ বছরে একবারের জন্যও স্কয়ারটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কিংবা জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে ফুল দিতে দেখা যায়নি স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পৌর কর্তৃপক্ষকে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আবদুল খালেক বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্কয়ার ও স্মৃতিস্তম্ভটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ফোয়ারাটি চালু করা হলে এটি অনেক নান্দনিক হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি এলাকাটিও একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হতে পারে। কিন্তু এসব বিষয়ে না আছে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা, না আছে পৌর কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথা।

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিনের নাতি এবং বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের সদস্যসচিব সোহেল চৌধুরী বলেন, ‘চৌরাস্তায় প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে একজন বীরশ্রেষ্ঠের প্রতি অসম্মান দুঃখজনক। পরিবারের সদস্য হিসেবে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেও আমার কাছে এটি কখনো কাম্য হতে পারে না।’ তিনি স্মৃতিস্তম্ভ ও স্কয়ারের শোভাবর্ধনসহ বীরশ্রেষ্ঠের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেভাবে ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্মৃতিস্তম্ভ ঢেকে রাখা হয়, এটি বীরশ্রেষ্ঠের প্রতি অসম্মান ছাড়া কিছুই নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেকবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি, কিন্তু কেউ কথা শোনে না। চৌমুহনী পৌরসভার বর্তমান মেয়র নিজেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনি কোনো পদক্ষেপ নেন না। এটি খুবই দুঃখজনক।’

চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র খালেদ সাইফুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ইতিমধ্যে একাধিকবার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্মৃতিস্তম্ভটি পরিষ্কার করিয়েছেন। কিন্তু কিছুদিন পর আবার একশ্রেণির লোকজন সেখানে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙিয়ে আবার ঢেকে ফেলেন। বর্তমানে চৌমুহনী ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনের প্রার্থীদের পোস্টার ও ফেস্টুনে স্মৃতিস্তম্ভটি ঢেকে ফেলা হয়েছে। তিনি শিগগিরই এগুলো অপসারণে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।

চৌমুহনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াছির আরাফাত প্রথম আলোকে বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্মৃতিস্তম্ভটি পোস্টার ও ফেস্টুনে ঢেকে থাকার বিষয়টি তিনি জেনেছেন। তবে দাপ্তরিক কাজের চাপে সেদিকে নজর দিতে পারেননি। শিগগিরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।