টাঙ্গাইলের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকীর বিজয়ের পর এবার কালিহাতী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তাঁর ছোট ভাই আজাদ সিদ্দিকী জয় পেয়েছেন। এ উপজেলায় তাঁরা আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন।
এ বিজয়ে কালিহাতীতে সিদ্দিকী পরিবারের অনুসারীরা উজ্জীবিত। আগামীতে শুধু এ এলাকা নয়, টাঙ্গাইল জেলার রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন তাঁদের অনুসারীরা। তবে কালিহাতীর আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, দলীয় কিছুটা কোন্দল ছিল, আর সমন্বয়েরও অভাব ছিল। তাই তাঁদের সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে।
কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, সিদ্দিকী পরিবারের বড় সন্তান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন। কালিহাতীর আওয়ামী লীগ লতিফ সিদ্দিকীর হাতে গড়া।
২০০৮ সালের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিত্ব লাভ করেন। ২০১৪ সালে হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার ও মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়। পরে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর উপনির্বাচনে হাসান ইমাম খান দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন থেকে লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতীর রাজনীতি থেকে নিজকে গুটিয়ে নেন। বেকায়দায় পড়েন তাঁর অনুসারীরা।
গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে লতিফ সিদ্দিকী আবার কালিহাতীতে যাতায়াত শুরু করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তাঁর অনুসারী আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে অবস্থান নেন। এবার কালিহাতী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকীর ছোট ভাই এস এ এম সিদ্দিকী ওরফে আজাদ সিদ্দিকী চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মোল্লাকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন।
সিদ্দিকী পরিবারের অনুসারীরা মনে করছেন, সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় কালিহাতীতে তাঁদের অবস্থান আবার সুসংহত হবে।
নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান এস এ এম সিদ্দিকী জানান, কালিহাতীর মানুষ সিদ্দিকী পরিবারকে ভালোবাসে। তাঁরাও কালিহাতীর মানুষকে তাঁদের পরিবার মনে করেন। তাঁদের পরিবারের মুক্তিযুদ্ধে অনেক অবদান রয়েছে। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর স্নেহ পেয়েছেন। তাঁরা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বাইরের কেউ নন। মানুষ ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। সবাইকে নিয়ে তিনি কালিহাতীর উন্নয়নে কাজ করবেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘কালিহাতী আওয়ামী লীগের কিছু নেতার বেইমানির কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা হেরেছে। সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনে পরাজয়ের কারণে আমরা সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমরা দলকে ঐক্যবদ্ধ করে যেকোনো অন্যায়–অবিচার হলে তার মোকাবিলা করব।’