সেই রিকশাচালককে দেখতে হাসপাতালে জেলা প্রশাসক

রিকশাচালক মাইনুজ্জামানকে দেখতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে
ছবি: প্রথম আলো

নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে রিকশা চালানো মাইনুজ্জামান ওরফে সেন্টুকে দেখতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় হাসপাতালে গিয়ে তিনি মাইনুজ্জামানের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।

জেলা প্রশাসক ওই রিকশাচালককে আশ্বাস দিয়েছেন, সুস্থ হলে তাঁকে আর রিকশা চালাতে হবে না। বসে থেকে করতে পারেন, এমন কাজের ব্যবস্থা করে দেবেন। এ সময় জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দীন আল ওয়াদুদ, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (গোপনীয় শাখা) মো. শামসুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

মাইনুজ্জামানের মেজ মেয়ে আঁখি খাতুন হাসপাতালে বাবার পাশে ছিলেন। আঁখি প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসক তাঁর বাবার চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন। কিছু টাকাও দিয়ে গেছেন। আর বলেছেন, ‘সুস্থ হলে আর তাঁকে রিকশা চালাতে হবে না।’ একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। একটা কার্ড দিয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সমস্যার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন মাইনুজ্জামান। সংসার চালানোর জন্য তাঁকে আর রিকশা চালাতে হবে না। তাঁর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অটোরিকশার পরিবর্তে তাঁর বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

সংসার চালাতে অক্সিজেনের নল পরেই রাজশাহী নগরে রিকশা চালাচ্ছিলেন মইনুজ্জামান

পাঁচ বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি রিকশা কিনেছিলেন মাইনুজ্জামান। দুই বছরের মাথায় নগরের ঘোষপাড়ার মোড়ে রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। পরে আবার ঋণ করে আরেকটি রিকশা কিনে সেটি চালাতেন। এরই মধ্যে হার্নিয়ার অস্ত্রোপচারের জন্য আরও ৫০ হাজার টাকা ঋণ করতে হয় তাঁর। প্রতি সপ্তাহে দুই জায়গায় ১ হাজার ৩৫০ টাকা করে কিস্তি দিতে হয়। দিনে তিনটি অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে। ওষুধ ও অক্সিজেন মিলে তার দিনে ৬০০ টাকা খরচ হয়।

দুই মাস ধরে তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অক্সিজেন ছাড়া চলতে পারছিলেন না। সর্বশেষ দুই দিন নাকে অক্সিজেনের নল নিয়েই রিকশা চালিয়েছেন। রোববার হাসপাতালে ভর্তি হন।

হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মাইনুজ্জামান। ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক হাসান তারিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিওপিডি ও যক্ষ্মার কারণে তাঁর ফুসফুস দুর্বল হয়ে গেছে। হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা আছে। এ জন্য ঠিকমতো অক্সিজেন টেনে নিতে পারছেন না তিনি। ‘কনসেনট্রেটর’ নামের যন্ত্র লাগিয়ে বাসায় বিদ্যুৎ থাকলে তিনি বাতাস থেকে স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেন টেনে নিতে পারবেন।

রিকশাচালক মাইনুজ্জামানকে নিয়ে আজ প্রথম আলো অনলাইনে ‘নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে রিকশা চালানো সেন্টু এখন হাসপাতালে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন পড়ে ঢাকা থেকে এক ব্যক্তি মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, তাঁর মায়ের জন্য একটা কনসেনট্রেটর মেশিন কিনেছিলেন তিনি। সেটা বাড়িতে পড়ে আছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন পড়ে তিনি জানতে পেরেছেন, রিকশাচালক মাইনুজ্জামানের যন্ত্রটি প্রয়োজন। তিনি প্রথম আলোর মাধ্যমে যন্ত্রটি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন।