৩০০ মিটারে খানাখন্দ, দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল 

এ সড়ক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিভাগের অধীন। তিন বছরের বেশি সময় ধরে সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে না।

নেত্রকোনা-আটপাড়া সড়কের ইসলামপুর মোড় থেকে স্বাবলম্বী হাসপাতাল পর্যন্ত সড়কে জমে আছে পানি। কাদা–পানি ছিটকে পড়ে আশপাশের দোকানে। গত বুধবার

কোথাও পিচঢালাই আছে, কোথাও নেই। বৃষ্টিতে পানি-কাদায় একাকার সড়ক। দিন দিন এসব খানাখন্দ গাড়ির চাকার চাপে ভাঙতে ভাঙতে বড় হচ্ছে। তাতে প্রতিনিয়তই উল্টে পড়ছে যানবাহন। আহত হচ্ছে যাত্রীরা। কাদাপানি ছিটে কাপড় নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যেই দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।

এ চিত্র নেত্রকোনা-আটপাড়া সড়কের ইসলামপুর মোড় থেকে স্বাবলম্বী হাসপাতাল পর্যন্ত। স্থানীয় লোকজন সড়কটি সংস্কারে বারবার দাবি জানালেও তা হচ্ছে না। এ সড়ক পৌরসভা এলাকার মধ্যে পড়লেও তা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিভাগের অধীন। তিন বছরের বেশি সময় ধরে সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে না।

ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা শাহপরান মিয়া বলেন, ‘সড়কটি এখন আমাদের এলাকার দুঃখে পরিণত হয়েছে। গর্ত থাকায় শহরের কোনো রিকশা বা অটো সহজে আসতে চায় না। কোনো মালামাল আনা–নেওয়া করা সম্ভব হয় না। জুতা পায়ে হেঁটেও যাওয়া যায় না। কাদা ছিটে জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়।’

গত বুধবার দুপুরে দেখা যায়, পৌর শহরের ইসলামপুর মোড় থেকে সড়কটি শুরু। সেখান থেকেই সড়কজুড়ে খানাখন্দ। বেরিয়ে পড়েছে ইটের খোয়া, বালু ও পাথর, জমে আছে পানি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আগে সড়কটি ভাঙাচোরা হলেও চলাচল করা যেত। এখন এ সড়ক দিয়ে হাঁটাও দায়। গত বর্ষায় খানাখন্দগুলো রূপ নিয়েছে বড় বড় গর্তে। গাড়ির চাকার চাপে ভাঙতে ভাঙতে গর্তগুলো আরও প্রশস্ত হচ্ছে। সিএনজি, ইজিবাইক, রিকশা, লরি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যান প্রায়ই উল্টে যাচ্ছে।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, ইসলামপুর থেকে স্বাবলম্বী হাসপাতালের সামনে পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মিটার সড়কে ছোট-বড় অন্তত ৩০টি গর্ত। কোনো কোনো গর্ত দেখে মনে হবে, যেন ছোটখাটো জলাশয়। কিছু গর্ত দুই থেকে-তিন ফুট পর্যন্ত গভীর। এর ফলে যানবাহনগুলো চলছে ঝুঁকি নিয়ে। বুধবার বেলা একটার দিকে সড়কের মধ্যে একটি গর্তে মোটরসাইকেল নিয়ে ঝলমল সরকার নামের এক ব্যক্তি উল্টে পড়েন। এতে তিনি পায়ে আঘাত পেলে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় কাদা ছিটে সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়া দুজন স্কুলশিক্ষার্থীর পোশাক নষ্ট হয়।

সড়কের পাশের মুদিদোকানি সেলিম মিয়া বলেন, টানা তিন বছর ধরে সড়কের এই অংশ খুবই নাজুক। বর্ষায় গর্ত বড় হচ্ছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে। মেরামতের জন্য তাঁরা বারবার এলজিইডি অফিসে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। গত বছর পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষ কিছু ইট–বালু ফেলে গিয়েছিল গর্তগুলোতে। সপ্তাহখানেক পর আবার একই অবস্থা হয়ে গেছে। সড়কটি মেরামত না করলে তাঁদের এখন আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

ইজিবাইকচালক সুলতান মিয়া বলেন, তিনি এই পথ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ছয়বার যাওয়া-আসা করেন। এবার বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। অল্প বৃষ্টিতেই গর্তসহ সড়কে পানি জমে যায়। এর ফলে কোনটা ছোট আর কোনটা বড় গর্ত, তা বোঝার উপায় থাকে না। গত সোমবার সন্ধ্যায় পাঁচজন যাত্রী নিয়ে গাড়ি উল্টে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আটপাড়া উপজেলা ছাড়াও নেত্রকোনা সদর উপজেলার আমতলা ইউনিয়ন ও নেত্রকোনা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জেলা শহরে যাতায়াতের একমাত্র পথ এটি। এ ছাড়া সড়কটির পাশেই রয়েছে বেসরকারি সংস্থা স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির প্রধান কার্যালয়, স্বাবলম্বী পরিচালিত হাসপাতাল, তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ চলাচল করে।

ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম বলেন, সড়কটিতে পানিনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি না থাকলেও পানি জমে থাকে। সড়কের এই দশার কারণে তাঁদের বেচাকেনাও কমে গেছে। 

পৌর মেয়র মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, সড়ক সংস্কারের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এলজিইডির কর্মকর্তাদের তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুর রহিম শেখ বলেন, সড়কের এ অবস্থা তাঁদের জানা আছে। আগামী বছর তা নতুন করে মেরামত করা হবে। এ বছর মানুষ ও যানবাহন চলাচলের জন্য গর্তে কিছু ইট, খোয়া ও বালু ফেলা হবে।