কক্সবাজারে আইজিপি: ট্রলারে ১০ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ চলছে

কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয় মাঠে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক সমুদ্র উপকূলে ডুবন্ত ট্রলারে ১০ জনের লাশ উদ্ধারের ঘটনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ‘শুরু থেকে আমরা এই হত্যাকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছি। ইতিমধ্যে ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া তিনজন আসামি আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে কাজ করছে পুলিশ।’

আজ বুধবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে কক্সবাজার শহরে পুলিশ সুপার কার্যালয় মাঠে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে খুনখারাবি আগের তুলনায় কমেছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরাও ধরা পড়ছে। মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। আশ্রয়শিবিরে শান্তি–শৃঙ্খলা রক্ষায় সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। তবে মাদকের কারণে টেকনাফসহ বিভিন্ন স্থানে অপহরণের ঘটনা ঘটছে। আশ্রয়শিবিরে সন্ত্রাস-মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও কঠোর হবে।

টেকনাফে অপহরণের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, মাদক চোরাচালান ও এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা গেলে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে। পুলিশ ইতিমধ্যে অপহরণ চক্রের কয়েকজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে।

এর আগে আইজিপি জেলার উখিয়ার ময়নারঘোনা রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেন এবং আশ্রয়শিবিরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সেখানকার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দুই দিনের সফরে কক্সবাজার আসেন আইজিপি।

আশ্রয়শিবির পরিদর্শন ও সেখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘গত এপ্রিল মাসে আশ্রয়শিবিরে বেশ কয়েকটা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। এপিবিএন, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় মে মাসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গোয়ান্দা নজরদারি বৃদ্ধি এবং সাড়াশি অভিযান পরিচালনার মধ্য দিয়ে আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া আছে। মাদক এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

গত পাঁচ মাসে আশ্রয়শিবিরগুলোতে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনায় ৪০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ১০ জন আরসা সদস্যও আছেন। এ অবস্থায় আরসামুক্ত আশ্রয়শিবির কখনো পাওয়া যাবে কি না, জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, কোনো সন্ত্রাসী বাহিনীকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। সন্ত্রাসীদের ধরতে একযোগে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ব্রিফিংয়ের সময় এপিবিএনের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জামিল হোসেন, অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (চট্টগ্রাম) প্রবীর কুমার রায়, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।