মৌলভীবাজারের জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলায় দিনে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকে না। এতে দুই উপজেলায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) অর্ধলক্ষাধিক গ্রাহক চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, চাহিদার অর্ধেকের কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ফিডারভিত্তিক (একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আওতাধীন এলাকা) লোডশেডিংয়ের সময়সূচি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া লাইন চালু থাকার সময় ঝোড়ো বাতাসসহ বিভিন্ন কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে।
বিউবোর সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে কুলাউড়াসহ পাশের জুড়ী উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। দুই উপজেলায় প্রতিদিনের চাহিদা ১৫ মেগাওয়াট। সেখানে এখন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৭ মেগাওয়াট।
কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকায় ছয়টি ১১ কেভি ফিডার ও দুটি ৩৩ কেভি ফিডার লাইন আছে। সেখানে গ্রাহকের সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি। আর জুড়ীতে তিনটি ১১ কেভি ও দুটি ৩৩ কেভি ফিডার লাইন রয়েছে। গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ১২ হাজার। কুলাউড়ায় বিদ্যুতের প্রতিদিনের চাহিদা ১৩ মেগাওয়াট। এখন পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে চার মেগাওয়াট। জুড়ীতে চাহিদা ছয় মেগাওয়াট, পাওয়া যাচ্ছে দুই থেকে আড়াই মেগাওয়াট।
দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১৫ জন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের সময়সীমা এক ঘণ্টা করে নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ সপ্তাহখানেক দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় থেকে ১০ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দোকানপাট ও বাসাবাড়ির জন্য অনেকে আইপিএস ও জেনারেটর কিনেছেন। কেউ কেউ জেনারেটর ভাড়াও এনেছেন।
কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, বারবার লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতির নিরসনে তাঁরা স্থানীয় বিউবোর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জাসদের নেতা মইনুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে রাত আটটায় দোকানপাট বন্ধ করতে হচ্ছে। দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। করোনায় দীর্ঘ সময় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে ব্যবসার চরম ক্ষতি হচ্ছে। লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
বিউবোর জুড়ী কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী আনসারুল কবির বলেন, প্রতিদিন কখনো দুই, আবার কখনো আড়াই মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিটি ফিডার লাইনে গড়ে তিন ঘণ্টা করে আট-নয় ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের ফিডারভিত্তিক সময়সূচি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বরাদ্দের তারতম্যের কারণে তা কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে উপজেলা পরিষদ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
আনসারুল কবির বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু থাকার সময় প্রায়ই ঝোড়া বাতাসে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া কারিগরি নানা সমস্যা থাকে। এ কারণেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়।
চলমান পরিস্থিতিতে লোকজনের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে বিউবোর কুলাউড়া বিক্রয়, বিতরণ ও সরবরাহ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওসমান গণি আজ শুক্রবার সকালে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, চাহিদার তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বিতরণে খুবই সমস্যা হচ্ছে। এরপরও তাঁরা গ্রাহকদের যথাসাধ্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।