মজুরির দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের রাষ্ট্রমালিকানাধীন পাত্রখোলা চা–বাগানে
মজুরির দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের রাষ্ট্রমালিকানাধীন পাত্রখোলা চা–বাগানে

এনটিসির চা–বাগানগুলোতে দেড় মাস মজুরি পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা, অনেকের ঘরে খাবার নেই

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মালিকানাধীন চা–বাগানের শ্রমিকেরা নিয়মিত কাজ করলেও মজুরি দিতে পারছে না মালিকপক্ষ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাত্র দুই সপ্তাহ মজুরি পেয়েছিলেন রাষ্ট্রমালিকানাধীন এসব চা–বাগানের শ্রমিকেরা।

প্রায় দেড় মাস ধরে মজুরি না পাওয়ায় অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। অনেকের ঘরে খাবার নেই। সামনেই শারদীয় দুর্গাপূজা হওয়ায় উৎসব বোনাস পাবেন কি না, তা নিয়েও শঙ্কায় দিন কাটছে তাঁদের।

মজুরি না পাওয়ার বিষয়ে মালিকপক্ষ বলছে, সরকার পতনের পর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে যাওয়ায় মজুরি দিতে পারেনি তারা। তবে পূজার আগেই মজুরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

কমলগঞ্জের এনটিসির মালিকানাধীন আটটি চা–বাগান আছে। এগুলো হলো পাত্রখোলা চা–বাগান, চাম্পা রায় চা–বাগান, কুরমা চা–বাগান, কুরঞ্জি চা–বাগান, বাঘা ছড়া চা–বাগান, মাধবপুর চা–বাগান, পদ্মছড়া চা–বাগান ও মদন মোহনপুর চা–বাগান।

বাংলাদেশ চা–শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, এই আটটি চা–বাগানে প্রায় আট হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের মজুরির ওপর আরও প্রায় ২০ হাজার মানুষের ভরণপোষণ নির্ভর করে। সরকার পতনের পর মাত্র দুই সপ্তাহ মজুরি পেয়েছিলেন তাঁরা।

পাত্রখোলা চা–বাগানের শ্রমিক সবিতা বাউরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘরে কোনো খাবার নেই, সরকার নামার পর মাত্র দুই সপ্তাহ মজুরি পেয়েছিলাম। আমরা চা–শ্রমিকেরা সপ্তাহে যে টাকা পাই, সেটা দিয়েই কোনোরকমে সংসারটা টেনে নিয়ে যাই। এখন হাতে টাকা নেই। পরিবারের লোকজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। আমরা খুবই কষ্ট করে জীবন চালাচ্ছি। মজুরি বন্ধ থাকায় বাগানের কোনো দোকানপাট থেকে বাকিতেও কোনো কিছু কিনতে পারছি না। এভাবে মজুরি বন্ধ থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’

ঘরে কোনো খাবার নেই, সরকার নামার পর মাত্র দুই সপ্তাহ মজুরি পেয়েছিলাম। আমরা চা–শ্রমিকেরা সপ্তাহে যে টাকা পাই, সেটা দিয়েই কোনোরকমে সংসারটা টেনে নিয়ে যাই। এখন হাতে টাকা নেই। পরিবারের লোকজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। আমরা খুবই কষ্ট করে জীবন চালাচ্ছি। মজুরি বন্ধ থাকায় বাগানের কোনো দোকানপাট থেকে বাকিতেও কোনো কিছু কিনতে পারছি না। এভাবে মজুরি বন্ধ থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
সবিতা বাউরী, শ্রমিক, রাষ্ট্র মালিকানাধীন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পাত্রখোলা চা–বাগান

পদ্মছড়া চা–বাগানের বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি কৃষ্ণলাল দেশোয়ারা বলেন, ‘আমাদের কমলগঞ্জের এনটিসির সব চা–বাগানেই একই অবস্থা। আমাদের শ্রমিকেরা মজুরি না পাওয়ায় খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। জমানো টাকা সব শেষ। দোকানদারেরাও বাকি দিচ্ছেন না। অনেককেই না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। সামনে আমাদের দুর্গাপূজা। এভাবে চলতে থাকলে হবে না। শ্রমিকদের আমরা অনেক বুঝিয়ে রেখেছি। শ্রমিকেরা মজুরি না পেলেও কাজে ঠিকই যাচ্ছেন। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে শ্রমিকেরাও আন্দোলন–সংগ্রামের দিকে এগিয়ে যাবেন। আমরা মালিকপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই, দ্রুত যেন মজুরির ব্যবস্থা করা হয়।’

কমলগঞ্জসহ সারা দেশে এনটিসির প্রায় ১৬টি চা–বাগান আছে। সব কটি চা–বাগানেই একই অবস্থা বলে জানান বাংলাদেশ চা–শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রায় প্রতিদিনই মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। শ্রমিকদের মজুরি যেন দ্রুত দেওয়া হয়, সে জন্য আমরা সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কয়েক দফা মিটিং করেছি। শ্রমিকেরা শুধু রেশন পাচ্ছেন, কিন্তু মজুরি পাচ্ছেন না। আর মাত্র কয়েক দিন পরই দুর্গাপূজা। শ্রমিকেরা যদি পূজার আগে মজুরি–বোনাস না পান, তাহলে কঠোর আন্দোলন–সংগ্রামে যাবেন। এতে চা–বাগানেরই ক্ষতি। আমরা সরকারের কাছেও দাবি জানাই, দ্রুত মজুরির ব্যবস্থা করা হোক।’

ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আমাদের বোর্ড প্রায় ভেঙে গেছে। আমাদের চেয়ারম্যানকেও আমরা পাচ্ছি না৷ এখন আমরা চেয়ারম্যান না থাকার কারণে কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতেও পারছি না। আজ মঙ্গলবার আমরা বোর্ড মিটিংয়ে বসব। নতুন করে চেয়ারম্যান বানানো হবে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে চা–বাগানগুলোতে মজুরি ও পূজার বোনাস দেওয়া হবে।’