বিদ্যালয়ে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেয়েটির বয়স ১৫ বছর। কিন্তু তার বিয়ে দেওয়ার জন্য দুদিন আগে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যের সহযোগিতায় নেওয়া নতুন জন্মনিবন্ধনে বয়স দেখানো হয় ১৯ বছর।
মেয়েটির বিয়ে ছিল আজ বুধবার। বাল্যবিবাহের খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন জেলা মহিলা পরিষদের কয়েকজন সদস্য। এরপর মহিলা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ইউপি সদস্য ও মেয়ের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ওই বিয়ে বন্ধ করেন তাঁরা।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি গ্রামে ওই বিয়ের আয়োজন ছিল। বরের বাড়িও একই গ্রামে। মেয়ের পরিবার প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মেয়েটির বিয়ে দেবে না বলে মহিলা পরিষদের সদস্যদের কাছে লিখিত অঙ্গীকার করেছে।
মহিলা পরিষদের নেতারা জানান, মেয়েটিকে বিয়ে দিতেই বয়স বাড়িয়ে ৮ জানুয়ারি একটি নতুন জন্মনিবন্ধন নেওয়া হয়। তাতে চার বছর বয়স বাড়ানো হয়। এতে সহযোগিতা করেন ইউপি সদস্য বাছির উদ্দিন। তিনি মেয়েটির বয়স প্রমাণের চিকিৎসা সনদও সংগ্রহ করে দেন। অথচ ২০১৯ সালে এলাকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েটির ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির তথ্যে জন্মতারিখ লেখা আছে ২০০৭ সালের ৪ মার্চ। নতুন জন্মনিবন্ধনে তার জন্মতারিখ লেখা হয়েছে ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি।
এলাকাবাসী জানান, মহিলা পরিষদের নেতারা ওই বাড়িতে গিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে বললে সেখানে ইউপি সদস্য বাছির উদ্দিন ও দোয়ারাবাজার উপজেলা মহিলা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি এনামুল হক দাবি করেন, মেয়েটির বিয়ের বয়স হয়েছে এবং এ-সংক্রান্ত জন্মনিবন্ধন আছে। তখন মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে মেয়েটির বিদ্যালয়ের তথ্য তুলে ধরার পর দুজনই থেমে যান। পরে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়।
ইউপি সদস্য বাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে বলা হয়েছিল, মেয়েটির ১৯ বছর হয়ে গেছে। সে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর আর পড়েনি। তাই তিনি বিদ্যালয়ের কাগজপত্র না দেখে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। তিনি বলেন, সবকিছু জানার পর বিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরি ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আজ একটা বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে পেরেছি। কিন্তু এ রকম বাল্যবিবাহের ঘটনা কিন্তু ঘটছে। বয়স বাড়িয়ে জন্মনিবন্ধন নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কোনো প্রতিনিধির সহযোগিতা থাকে, এটা দুঃখজনক। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’