খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন শুরু হয়েছে দুই দিনের ‘পরিবহন ধর্মঘট’। এ কারণে খুলনায় কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারছে না। খুলনা থেকে কোনো যান ছাড়াও বন্ধ রয়েছে। খুলনা থেকে ১৮টি রুটে দুই শতাধিক বাস চলাচল করে।
সড়ক ও মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইকসহ সব অবৈধ যান চলাচল বন্ধের দাবিতে এ ধর্মঘটের ডাক দেয় জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতি। ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন। তবে বিএনপির দাবি, আগামীকাল শনিবার খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ রয়েছে। ওই গণসমাবেশ বানচাল করতে ও বিপুল মানুষের উপস্থিতি ঠেকাতে ‘ষড়যন্ত্র’ করে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ শুক্রবার সকাল থেকে খুলনার সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢাকা-খুলনা রুটের বাস ঢাকা থেকে যশোর ও গোপালগঞ্জ পর্যন্ত চলছে। সাতক্ষীরামুখী যেসব বাস যশোর হয়ে চলে, সেগুলো চলছে। তবে যেগুলো খুলনা হয়ে চলে, সেগুলো বন্ধ রয়েছে। মূলত খুলনায় কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে ও খুলনা থেকে বিভিন্ন রুটে গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে না।
এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে সমাজসেবা কার্যালয়ের ইউনিয়ন সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা ব্যক্তিদের ভোগান্তি ছিল সবচেয়ে বেশি। সব রুটের বাস বন্ধ থাকায় সকাল থেকে ইজিবাইক, ভ্যানে করে খুলনায় এসেছেন তাঁরা। ছুটির দিনে যাঁরা খুলনা বা এর আশাপাশের জেলায় বেড়াতে যেতে চেয়েছিলেন, তাঁরাও যেতে পারেননি।
ডুমুরিয়ার চুকনগর থেকে খুলনার দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষা দিতে সেখান থেকে সকাল ৬টার দিকে খুলনার উদ্দেশে বের হয়েছিলেন কমলেশ বৈরাগী। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় জিরো পয়েন্ট এলাকায়। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে সমাজসেবা কার্যলয়ের সমাজকর্মী পদে আবেদন করেছিলেন। গত বছর দুবার পরীক্ষার তারিখ দিয়েও পরীক্ষা হয়নি। সর্বশেষ আজ পরীক্ষার দিন আছে। খুলনায় কোথাও থাকার জায়গা নেই। তাই পরীক্ষা দিতে বাড়ি থেকেই আসতে হয়েছে। গাড়ি না চলায় ইজিবাইক, ভ্যানে কষ্ট করে খুলনায় পৌঁছেছেন।
ঢাকা থেকে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলায় পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ভ্রমণে আসতে চেয়েছিলেন তানভীর আহমেদ। সুন্দরবনের একটি রিসোর্টও বুকিং করা ছিল তাঁদের। আজ সকালে ঢাকা থেকে মোংলার বাসের টিকিটও কাটা ছিল। মুঠোফোনে তানভীর আহমেদ বলেন, সকালে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে তাঁরা গিয়ে দেখেন গাড়ি চলছে না। গাড়ি যাচ্ছে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত। এরপর ভেঙে ভেঙে মোংলা পর্যন্ত যেতে হবে। সেটির দূরত্বও প্রায় ৮০ কিলোমিটার। কিন্তু পরিবারের ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে সেভাবে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ফিরে গেছেন।
গত বুধবার সকালে খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতির বৈঠকের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধভাবে নসিমন, করিমন, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক ও বিআরটিসির গাড়ি চলাচল করছে। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রশাসন যদি সড়কে ওই অবৈধ যান চলাচল ও কাউন্টার বন্ধ না করে, তাহলে পরবর্তী দুই দিন ২১ ও ২২ অক্টোবর মালিক সমিতির সব রুটের গাড়ি বন্ধ থাকবে।
খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি হলেন মো. মিজানুর রহমান। তিনি খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের খুলনা মহানগর শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক। জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ধর্মঘটের সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে শনিবার খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি। ইতিমধ্যে সমাবেশের অনুমতিও মিলেছে। খুলনা শহরের ডাকবাংলো ও ফেরিঘাট মোড়ের মাঝামাঝি সোনালী ব্যাংক চত্বরে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। বাধা সত্ত্বেও ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের সমাবেশের তুলনায় খুলনায় জনসমাগম বেশি হবে বলে আশা করছে বিএনপি।