কুমড়ার বড়ি শুকানোর কাজ চলছে। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নওগাঁ এলাকায়
কুমড়ার বড়ি শুকানোর কাজ চলছে। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নওগাঁ এলাকায়

সিরাজগঞ্জের গ্রামে কুমড়ার বড়ি তৈরির ব্যস্ততা

গ্রামের নাম নওগাঁ। গ্রামে ঢোকার আগে রাস্তার ডান পাশে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ কুমড়ার বড়ি দিচ্ছিলেন। কাছে গিয়ে দেখা গেল, কুমড়ার বড়ি শুধু তৈরি নয়, সেগুলো রোদে শুকানো আর বিক্রির জন্য প্রস্তুতও করা হচ্ছে। এটি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ গ্রামের শীত মৌসুমের দৃশ্য।

এ গ্রামের ১৫-২০টি পরিবার কুমড়ার বড়ি তৈরির সঙ্গে যুক্ত। এখানকার কুমড়ার বড়ির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ভোজনরসিকদের কাছে পণ্যটির রয়েছে আলাদা চাহিদা। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ গ্রামে তৈরি কুমড়ার বড়ি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা।

শীতকালকে কুমড়ার বড়ি তৈরির প্রধান মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ সময় শীতের সবজির সঙ্গে কুমড়ার বড়ির মিশ্রণ একটি জনপ্রিয় খাবার।

রোববার নওগাঁ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জনাদশেক নারী কাজ করছেন এখানে। কেউ কেউ কুমড়ার বড়ি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো একত্র করে মাখাচ্ছেন। তিনজন কাপড়ের মধ্যে তুলে বিশেষ কায়দায় বড়ি দিচ্ছেন। রোদে একটু শক্ত হলে সেগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন আরও কয়েকজন।

কুমড়ার বড়িগুলো মো. আল আমিনের একজন ব্যবসার উদ্দেশ্যেই তৈরি করছিলেন। তিনি বলেন, এখানে কাজ করা নারীরা সকালের শীতল পরিবেশে চাল, কুমড়া ও মাষকলাইয়ের মিশ্রণে মণ্ড তৈরি করেন। এরপর বাঁশের কাঠির তৈরি নেটে পাতলা কাপড়ের ওপর বড়ি বানানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই ঘণ্টা কাজ করে নারী শ্রমিকেরা ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান।

জোসনা রানী ও আকলিমা খাতুন বলেন, সংসারের কাজের ফাঁকে এখানে কুমড়ার বড়ি তৈরির কাজ করেন। যা উপার্জন করেন, তা সংসারের জন্য খরচ করেন।

গত বছরের চেয়ে এবার কুমড়ার বড়ির চাহিদা আরও বেড়েছে বলে জানান মো. শফিকুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী। বাজারে সাধারণ মানের কুমড়ার বড়ি প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকা এবং ভালো মানের কুমড়ার বড়ি ৪৫০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা পাইকারদের কাছে অনেক কম দামে এই বড়ি বিক্রি করেন বলে জানান। স্থানীয় চাহিদা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং প্রবাসী স্বজনদের কাছেও এই বড়ি পাঠানো হচ্ছে।

শীতের দিনে কুমড়ার বড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নওগাঁ এলাকায়

মো. আল আমিন বলেন, ‘পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে আমরা কুমড়ার বড়ি তৈরি করে আসছি। আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে কাজ কিছুটা সহজ হয়েছে। তবে সরকারি সহায়তা পেলে আমরা বড় পরিসরে কুমড়ার বড়ি তৈরি করতে পারব।’

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, কুমড়ার বড়ি তৈরির মাধ্যমে অনেক মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। তাঁদের প্রয়োজনীয় ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়ে ব্যবসা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করা হবে।