শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভবনটির বয়স হয়েছে ১২০ বছর। বিম ফেটে রড বেরিয়ে গেছে। যখন–তখন যেকোনো জায়গা থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে।
দেশসেরা রাজশাহী কলেজের মহারানী হেমন্তকুমারী হিন্দু ছাত্রাবাসের বয়স হয়েছে ১২০ বছর। বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। বৈদ্যুতিক সংযোগ ঠিকমতো কাজ করে না। ছাদের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে গেছে। অনেক আগে যে ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা উচিত ছিল, সেই ভবন এখন শুধু প্লাস্টার করে মেরামত করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পুরোনো প্লাস্টার চটিয়ে আবার প্লাস্টার করলেও এ ভবনের নিচে থাকা নিরাপদ হবে না।
আপাতত প্লাস্টার চটিয়ে নতুন করে প্লাস্টার করে কোনোরকমে ঠেকিয়ে নতুন ভবনের জন্য আবেদন করা হবে।আবদুল খালেক, অধ্যক্ষ, রাজশাহী কলেজ
গত ১০ সেপ্টেম্বর এই ছাত্রাবাসের রুগ্ণ দশা নিয়ে প্রথম আলোতে ‘দেশসেরা কলেজের ছাত্রাবাস/ছাদে পলিথিন বেঁধে থাকেন শিক্ষার্থীরা।’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর কয়েক দিন পর কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাসটির সংস্কারকাজ শুরু করে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভবনটির বয়স হয়েছে ১২০ বছর। বিম ফেটে রড বেরিয়ে গেছে। যখন–তখন যেকোনো জায়গা থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। এ অবস্থায় ভবনের পলেস্তারা চটিয়ে আবার প্লাস্টার করে দেওয়া হচ্ছে। ভবনের মূল দুর্বলতা ভেতরেই থেকে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওই ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসের নিউ হোস্টেলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হেমন্তকুমারী হিন্দু ছাত্রাবাসের দেয়ালের প্লাস্টার চটিয়ে দিয়ে নতুন করে শুধু প্লাস্টার করা হচ্ছে। আর ছাদের এক ইঞ্চি পরিমাণ ঢালাই তুলে চিকন পাথর দিয়ে ঢালাই করে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
রাজশাহী কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিংয়ে এবার চতুর্থবারের মতো সেরা হয়েছে। অথচ এ কলেজের একটি ছাত্রাবাসের এই হাল। কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯০১ সালে মহারানী হেমন্তকুমারীর দানে রাজশাহী কলেজের হিন্দু ছাত্রাবাসের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। পরের বছর থেকে এটি কলেজের আবাসিক ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর দুটি ব্লকের ১১টি কক্ষে ৫২ জন আবাসিক শিক্ষার্থীর আবাসনব্যবস্থা রয়েছে।
১২০ বছর বয়সী দুর্বল এ ভবনের শুধু বাইরে প্লাস্টার করা হচ্ছে। তাঁদের ধারণা, ভেতরের দুর্বলতা দূর না করে শুধু বাইরে প্লাস্টার করে টাকা নষ্ট করা হচ্ছে। কিছুদিন পর হয়তো এ প্লাস্টার আবার খুলে পড়বে। দুর্ভোগ দূর হবে না। মাঝখানে টাকা নষ্ট হবে। শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা জরুরি।
ভেতরের দুর্বলতা দূর না করে শুধু বাইরে প্লাস্টার করে টাকা নষ্ট করা হচ্ছে। কিছুদিন পর এ প্লাস্টার আবার খুলে পড়বে।কার্তিক কুমার, ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী
কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল খালেক বলেন, ছাত্রাবাসের জন্য আলাদাভাবে বরাদ্দ নেই। অন্য খাতের ১০ লাখ টাকা দিয়েই এ সংস্কারকাজ শুরু করা হয়েছে। তবু এটা দিয়ে সব কাজ হবে না, আরও টাকা লাগবে। আপাতত প্লাস্টার চটিয়ে নতুন করে প্লাস্টার করে কোনোরকমে ঠেকায়ে নতুন ভবনের জন্য আবেদন করা হবে।
কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মহা. হবিবুর রহমান বলেন, এটা রাজশাহী কলেজের প্রথম ছাত্রাবাস। ভবনটি মহারানী হেমন্তকুমারী নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। এ স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এটা হেরিটেজ হিসেবে রাখার উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল। ভবনের পুরো ছাদটা ফেলে দিয়ে নতুন করে ছাদ দিতে পারলে ঐতিহ্যবাহী ভবনটি রক্ষা করা যেত। তবে বরাদ্দ না থাকার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।