মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় পূর্ববিরোধ কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আওয়ামী লীগের এক নেতা নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার দিঘিরপাড় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সোহরাব খান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁর বাড়ি উপজেলার মূলচর এলাকায়। ওই ঘটনায় তাঁর ছেলে জনি খানও (৩০) আহত হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজনদের অভিযোগ, ওই তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক মো. শাহ আলমের সহযোগিতায় এবং তাঁর সামনেই ওই খুনের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে ওই ঘটনার পর তদন্ত কেন্দ্রের সামনে উত্তেজিত জনতা অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা পরিদর্শক মো. শাহ আলমের শাস্তি দাবি করেন। পরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুলিশি প্রহরায় সেখান থেকে শাহ আলমকে বের করে নিয়ে গাড়িতে ওঠানো হয়।
পুলিশের সামনে আমার ভাই ও ভাতিজার ওপর হামলা হয়েছে। শাহ আলমের সামনে ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ভাতিজার অবস্থাও খারাপ। পুলিশ সব দেখল, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিল না।মিজান খান, নিহত সোহরাব খানের ছোট ভাই
নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই মিজান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন আমার ভাইকে হত্যা করেছে। তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক শাহ আলম কেন আমার ভাইকে ফোন করে একা তদন্ত কেন্দ্র যেতে বলেছিলেন? পুলিশের সামনে আমার ভাই ও ভাতিজার ওপর হামলা হয়েছে। শাহ আলমের সামনে ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ভাতিজার অবস্থাও খারাপ। পুলিশ সব দেখল, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিল না।’
এই অভিযোগের বিষয়ে পরিদর্শক মো. শাহ আলমের কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি। এ সম্পর্কে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) তোফায়েল হোসেন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার খবর পাওয়ামাত্রই থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, ইতিমধ্যে অনেকের নাম জেনেছি। তাঁদের ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান শুরু হয়েছে।’ পরিদর্শক শাহ আলমের সামনে ছুরি মেরে হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। যদি পুলিশের কেউ এখানে জড়িত থাকেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।
নিহত ব্যক্তির স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, টাকাপয়সা লেনদেন কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব খান ও দিঘিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আসলাম হোসেন ওরফে ভোলার সঙ্গে বিরোধ চলছে। আজ সকালে উভয় পক্ষকে নিয়ে সালিস বসার কথা ছিল। সকালে আসলাম খানের ছেলে দুই ছেলে রিয়াম হালদার ও রিজভী হালদার ও তাঁদের সহযোগীরা দিঘিরপাড় তদন্ত কেন্দ্রে আসেন। দুপুর ১২টার দিকে সোহরাব খান ও তাঁর ছেলে জনিকে মুঠোফোনে ডেকে আনেন পুলিশের পরিদর্শক মো. শাহ আলম।
সোহরাব খান তদন্ত কেন্দ্রের দরজার সামনে আসতেই রিয়ান ও তাঁর সহযোগীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। মারধর করে সোহরাব খান ও তাঁর ছেলে জনিকে তদন্ত কেন্দ্রের মাঠে নিয়ে যান তাঁরা। একপর্যায়ে তাঁরা ওই দুজনকে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে টঙ্গিবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
হাসপাতালের চিকিৎসক প্রণয় মান্না জানান, আজ দুপুর সাড়ে ১২টার পরে দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে সোহরাব খানকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। তাঁর ছেলের অবস্থাও সংকটাপন্ন ছিল। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই দুজনের শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন রয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সেলিম সরদার নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সোহরাব খানের সঙ্গে দিঘিরপাড় বাজারে ছিলাম। তিনি আমাকে ডেকে তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। আমার সামনেই তাঁকে প্রথমে বেদম পেটায় এবং সুইচগিয়ার (ছুরি) দিয়ে পোচ দেয়। তাঁদের বাঁচাতে গেলে আমাকেও ছুরি মারে। আমি কোনোরকমে পালিয়ে জানে বাঁচি।’