রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় গত শনিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। আজ সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনও বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন উপজেলার মানুষ।
রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর অধীনে বদরগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হয়। এলাকার লোকজন বলেন, গত শনিবার মধ্যরাতে পুরো উপজেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এর পর থেকে আর বিদ্যুৎ আসেনি। এতে বাসাবাড়িতে ও বিভিন্ন পশুর খামারে পানি উত্তোলনের বৈদ্যুতিক মোটরগুলো বন্ধ হয়ে পড়ায় পানিসংকটে বিপাকে পড়েন খামারিরাসহ উপজেলার মানুষ।
বিদ্যুতের অভাবে উপজেলায় মুঠোফোন নেটওয়ার্কেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।
দামোদরপুরের বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুস সালাম বলেন, ‘ঈদের দিন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় এর আগে কখনোই ছিলাম না। সামান্য বৃষ্টি হওয়ার পর গত শনিবার মধ্যরাতে বিদ্যুৎ চলে গেছে। এর পর থেকে আজ ঈদের দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ আর আসবে না, সেটা কি ভাবা যায়!’
রামনাথপুর ট্যাক্সেরহাট গ্রামের ইদ্রিস আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এবারে আমাদের ঈদের আনন্দ মাটি করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বাড়ির বৈদ্যুতিক মোটর বন্ধ থাকায় পানির সংকটে পড়েছি। বিদ্যুতের কর্মীদের গাফিলতির কারণেই আমরা ঈদের দিনও দুর্ভোগে পড়েছি। তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
বদরগঞ্জ পৌরসভার শাহাপুর গ্রামের মজিবর রহমান বলেন, ‘তিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। চালু করার ব্যাপারে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না বিদ্যুতের কর্মীদের। আমাদের টাকায় বিদ্যুতের কর্মীরা বেতন-ভাতা পান। অথচ এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর থেকে অভিযোগকেন্দ্রসহ বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফোন কখনো বন্ধ পাচ্ছি, আবার কখনো চালু পেলেও তাঁরা ফোন ধরছেন না।’
বাংলারহাট গ্রামের মানিক মিয়া বলেন, ঈদের দিনও বিদ্যুৎ থাকবে না, সেটা স্থানীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে মাইকিং করে কিংবা অন্য কোনোভাবে গ্রাহকদের আগাম জানানো উচিত ছিল।
আসমতপাড়া গ্রামের গৃহবধূ হাসিনা বেগম বলেন, ‘শনিবার মধ্যরাতে বিদ্যুৎ চলে গেছে। ভাবলাম, রোববার আসবে, কিন্তু এল না। পরে ঈদের দিন আজ সোমবার অবশ্যই বিদ্যুৎ আসবে। কিন্তু দুপুর গড়ালেও বিদ্যুৎ এল না। পানির অভাবে সংসারের সব কাজ থমকে গেছে। ঈদের আনন্দও মাটি হয়েছে।’
বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালিয়ে চাল-গম ভেঙে আটা তৈরি করেন বদরগঞ্জ পৌরসভার উজ্জ্বল হোসেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল রোববার দুপুর থেকে মানুষ চাল গম ভেঙে আটা করতে আমার মিলে (কারখানায়) আসেন। শেষে শত শত মানুষ গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে বিদ্যুতের অভাবে ফিরে গেছেন।’
আমরুলবাড়ি আফতাবগঞ্জ ঈদগাহ মাঠের পরিচালক আবদুল মতিন সরকার বলেন, ‘ঈদের দিন বিদ্যুৎ থাকবে না, তা কি হয়! বাসাবাড়িতে পানি উত্তোলনের বৈদ্যুতিক মোটরগুলো বন্ধ থাকায় পানিসংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে সকালে অজু-গোসল করতে না পারায় ঈদগাহ মাঠে নামাজ পড়তে পর্যন্ত আসেননি। এ কারণে এবার আমাদের ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায়ে তুলনামূলকভাবে মানুষের উপস্থিতি ছিল কম।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার মোস্তফাপুর ঈদগাহ মাঠ, ট্যাক্সেরহাট, দামোদরপুর, শেখেরহাট, জামালপুর ও নাগেরহাট ও বদরগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে আজ সকালে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব মাঠে নামাজ আদায়ে মানুষের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম।
অফিসপাড়া গ্রামের পশু খামারি শাহাদৎ হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় শনিবার থেকে পানির অভাবে পশু ও খামার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে পারছি না।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ বদরগঞ্জ এলাকা ব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, ‘আর পারছি না। বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপর থাকা ইনস্যুলেটরগুলো একের পর এক ঠিক করার পরও কোনোভাবেই বিদ্যুৎ চালু করা যাচ্ছে না।’
রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর মহাব্যবস্থাপক খুরশিদ আলম মুঠোফোনে বলেন, ‘বজ্রপাতে ৩৩ কেভি লাইনে অন্তত ২৬টি ইনস্যুলেটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সবকিছু সারিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার। কিন্তু কখন তা চালু করা সম্ভব হবে, বলা মুশকিল।’