কুষ্টিয়ার কুমারখালীর রেজাউল করিম পেশাদার গরুর ব্যাপারী। গত মঙ্গলবার রাত ১০টায় ৫টি গরু নিয়ে কুষ্টিয়া থেকে রওনা হন উত্তরার দিয়াবাড়ি হাটের উদ্দেশে। ভোর চারটায় ট্রাকটি উত্তরার কামারপাড়া মোড় এলাকায় পৌঁছাতেই হঠাৎ লাঠিসোঁটা নিয়ে পথ আটকে ধরেন ২০ থেকে ৩০ জন যুবক। তাঁরা গরুর ট্রাকটি ছিনিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী গরুর হাটে (রানাভোলা হাট) নেওয়ার চেষ্টা করেন।
রেজাউল কিছুতেই ওই হাটে যাবেন না। প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওই যুবকেরা। একপর্যায়ে ট্রাকে ওঠে গরুর রশি কেটে দেওয়ার পাশাপাশি ট্রাকের চালককে মারধর শুরু করেন তাঁরা। পরে ভয়ে যুবকদের কথামতো হাটটিতে গরু নামান রেজাউল।
গতকাল বুধবার বেলা দুইটার দিকে হাটে গিয়ে কথা হয় রেজাউলের সঙ্গে। পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ২০ বছরের পাইকারি জীবনে কোনো দিন এমন ছিনতাইয়ের শিকার হইনি। এইড্যা নতুন হাট। শেষ পর্যন্ত গরু বিক্রি করতে পারব কি না, সে চিন্তায় ঘুম নাই।’
শুধু রেজাউল নন। হাটটিতে প্রায় সব বিক্রেতার কাছ থেকেই গরু ছিনতাইয়ের এমন বর্ণনা পাওয়া যায়। কাঙ্ক্ষিত হাটে যেতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন ব্যাপারীরা। গরু বিক্রি নিয়েও তাঁরা ভুগছেন দুশ্চিন্তায়।
রাজধানীর কামারপাড়া মোড়ের পাশেই রানাভোলা এলাকা। পাশ দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়ক। মহাসড়কটির পাশের নিচু জায়গায় রয়েছে কয়েক বিঘা ফাঁকা জায়গা। এর পাশেই বইছে তুরাগ নদ। হাটটি বসছে নদ ও মহাসড়কের মাঝখানের ফাঁকা জায়গায়।
সরেজমিন দেখা যায়, এরই মধ্যে কিছু গরু উঠেছে হাটটিতে। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, জামালপুর, নেত্রকোনা, চুয়াডাঙ্গা, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার গরু। হাটে ক্রেতা নেই। গরুর পাশেই অবস্থান করছেন বিক্রেতা বা ব্যাপারীরা। প্রতিবেদক কৌশলে হাটের ১৫ জন গরু বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলেন। এর মধ্যে সবাই মহাসড়ক থেকে তাঁদের গরু ছিনিয়ে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
এসব বিক্রেতারা জানান, রাত ৯টার পর থেকেই মহাসড়কের কামারপাড়া মোড়, ইজতেমার টয়লেট বিল্ডিং ও আইইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে লাঠি হাতে অবস্থান করেন হাটের লোকজন। গরুবোঝাই কোনো ট্রাক এলেই তাঁরা পথ আটকে ধরেন। এরপর চালক বা গরুর ব্যাপারীকে মারধর করে গরু ছিনিয়ে নেওয়া হয় হাটে। এ সময় সড়কে পুলিশ থাকলেও কেউ এ কাজে বাধা দেননি বলে অভিযোগ তাঁদের।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে গরু ছিনতাইয়ের ছবি তুলতে গিয়ে মারধরের শিকার হন দৈনিক আজকের পত্রিকার উত্তরা প্রতিনিধি নুরুল আমিন হাসান।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মো. শাহজাহান বলেন, ‘আমরা এ বিষয়টি শুনেছি। যাঁদের গরু ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, তাঁরা কেউ অভিযোগ করলে আমরা হাটের লোকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে জানতে হাটের ইজারাদার মো. মামুন বাচ্চুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
হাট সরাতে ডিএনসিসিকে চিঠি
নদের তীর থেকে হাটটি সরিয়ে নিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) চিঠি দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। বুধবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহে আলমের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর ওই চিঠিতে বলা হয়, উত্তরার ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে ১০ নম্বর সেক্টর রানাভোলা অ্যাভিনিউ-সংলগ্ন উত্তরা রানাভোলা স্লুইচগেট পর্যন্ত পশুর হাট ইজারা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এটি বিআইডব্লিউটিএ টঙ্গী নদীবন্দরের অধীন তুরাগ নদের ভূমি এবং বিশ্ব ইজতেমার মজলিসের জায়গা। ফলে এখানে হাট বসলে গরু বা ছাগলের মলমূত্রে জায়গাটির পবিত্রতা নষ্টসহ নদের পরিবেশ দূষিত হবে।
টঙ্গী নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘আমরা গতকাল বৃহস্তিবহাটটি সরিয়ে নিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। চিঠি গ্রহণও করা হয়েছে।’
চিঠির বিষয়ে জানতে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মাহে আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।